আজ আন্তর্জাতিক মাদকবিরোধী দিবস। প্রতি বছর ২৬ জুন বিশ্বজুড়ে মাদকের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচার রোধে দিবসটি পালিত হয়। অন্যান্য দেশের সঙ্গে মিল রেখে বাংলাদেশেও এবার দিবসটি পালন করা হবে।
দিবসটি উপলক্ষে গতকাল বুধবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ৩২টি বেসরকারি মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রের প্রতিনিধিদের মধ্যে আর্থিক অনুদানের চেক বিতরণ করেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
সে সময় তিনি বলেছেন, আমাদের দুটো বড় শত্রু দুর্নীতি এবং মাদক। মাদক থেকে কীভাবে আমরা মুক্ত হতে পারি, এ সম্পর্কে সবাইকে সচেতন করতে হবে।
মাদকসেবীদের সংখ্যা যেন ধীরে ধীরে পুরোপুরি কমে আসে। যেভাবেই হোক আমাদের সমাজ থেকে মাদককে উচ্ছেদ করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, শুধু মাদক নিরাময় কেন্দ্র করে সমস্যার সমাধান করা যাবে না। মাদক যেন বাইরে থেকে ঢুকতে না পারে। মাদক ঢোকানোর সঙ্গে যারা জড়িত তাদের তথ্য আমাদেরকে দেন।
মাদক আমাদের ভাই-বোন, ছেলে-মেয়ে সবাই ইনভল্ভ হয়ে গেছে। ১ম, ২য় বা ৩য় শ্রেণিতেও মাদক ছেয়ে গেছে।
মাদকাসক্তির নিরাময়ের খরচ অনেক বেশি। অনেক গরিব এটা বহন করতে পারে না। আমি আশা করব, মাদক নিরাময় কেন্দ্রে যেন কারও ঢুকতে না হয়।
সীমান্তবর্তী রাষ্ট্রগুলোতে মাদক উৎপাদন হয় এবং সেগুলো একটি চেইনে বাংলাদেশে প্রবেশ করে, কিন্তু দীর্ঘদিনেও এ সমস্যার সমাধান কেন হচ্ছে না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এক সময় ফেনসিডিল বাচ্চাদের পেটে ব্যথা হলে খাওয়ানো হতো। সাপের মতো একটা ছবিও থাকত। আমি অনেক সময় বিজিবি সেনাদের বলতাম, যদি ফেনসিডিল ১০০-২০০ টাকার বিনিময়ে দাও, এগুলো একটা সময় তোমার পরিবারের কেউ খেলে তখন বুঝবে। এটা শুধু আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নয়, আমাদের সবার বুঝতে হবে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. হাসান মারুফ বলেছেন, দেশ থেকে মাদক নির্মূল করতে আমরা নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। পুলিশ-র্যাবের সঙ্গে আমরাও দেশের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করছি।
আজ মাদকবিরোধী র্যালি ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে।
সকালে ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আলোচনা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। এতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারীসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, সরকার মাদক অপরাধী, চোরাকারবারি, পৃষ্ঠপোষক ও তাদের সহযোগীদের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি প্রয়োগ করছে।
পথশিশুসহ মাদকাসক্তরা যারা কঠিন জীবনযাপন করছে, তাদের সরকারি ও বেসরকারি নিরাময় কেন্দ্রে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ১৯৮০ সাল পর্যন্ত গাঁজাসহ বিভিন্ন মদ ছিল সাধারণ মাদক।
সরকারি নিবন্ধিত দোকানে গাঁজা ও আফিম বিক্রি হতো রাজস্ব আদায়ের জন্য। আশির দশকের শেষে গাঁজা নিষিদ্ধ হলে হেরোইন এর স্থান দখল করে। তবে নিষিদ্ধ হওয়ার পর গাঁজার বাজার আরও বিস্তৃত হয়।
কয়েক বছর পর কাশির ওষুধ হিসেবে পরিচিত ফেনসিডিল বাংলাদেশে জনপ্রিয় হয়, যা ভারত থেকে আসত। ২০০০ সাল পর্যন্ত ফেনসিডিল ছিল সবচেয়ে প্রচলিত মাদক। পরে ইনজেকশনের মাধ্যমে মাদক গ্রহণের প্রবণতা বাড়ে। ফেনসিডিল ও হেরোইনের স্থান দখল করে ইনজেকশন জাতীয় মাদক।
২০০০ সালের পর মিয়ানমার থেকে সিনথেটিক ড্রাগ বাংলাদেশে আসতে শুরু করে। ২০০৫ সালের পর তা দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। একই সময়ে ড্যান্ডির প্রচলন বাড়ে, যা বেশি সেবন করে পথশিশুরা।
সম্প্রতি ক্রিস্টাল মেথ, এলএসডি, ডিওবি, এমডিএমএর মতো মাদক শহরের তরুণরা গ্রহণ করছে। অনলাইন মাধ্যম এসব মাদকের বিস্তারকে সহজ করেছে। বর্তমানে কিশোর ও শিশুদের মধ্যেও মাদক সেবনের প্রবণতা বেড়েছে।