ব্যবসায়ী গোষ্ঠী এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলমের সাইপ্রাসে থাকা দুই তলা বাড়ি জব্দের আদেশ দিয়েছে আদালত।
সেই সঙ্গে সাইফুল আলম ও তার স্ত্রী ফারজানা পারভীনের নামে ব্রিটিশ ভার্জিন দ্বীপপুঞ্জে থাকা ১৯ কোম্পানির শেয়ার ও যুক্তরাজ্যের স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল জার্সিতে থাকা ৬টি ট্রাস্ট কোম্পানির শেয়ার অবরুদ্ধ করার আদেশ দিয়েছে আদালত।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. জাকির হোসেন গালিবের আদালত এ আদেশ দেয়।
দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেন। দুদকের উপপরিচালক তাহাসিন মুনাবীল হক বাড়ি জব্দ এবং শেয়ার অবরুদ্ধ চেয়ে আবেদন করেন।
ব্রিটিশ ভার্জিনিয়া দ্বীপপুঞ্জের রেকর্ড অনুযারী সাইফুল আলম ও তার স্ত্রীর নামে থাকা ১৮ টা কোম্পানির একটি হলো, হ্যাজেল ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড। যার মূল্য, তিন লক্ষ পঞ্চাশ হাজার ডলার।
এর মধ্যে মোহাম্মদ সাইফুল আলমের নামে শেয়ার ৭০ শতাংশ আর তার স্ত্রী ফারজানা পারভীনের নামে আছে, ৩০ শতাংশ। এছাড়া ব্রিটেনে সাইফুল আলম ও তার স্ত্রী ফারজানা পারভীন জার্সি ট্রাস্ট কোম্পানির অধীনে ছয়টি ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠান গঠন করেছে।
প্রতিষ্ঠানগুলো হলো, ম্যাপল ট্রাস্ট, ক্যাপরি ট্রাস্ট, স্যারি ট্রাস্ট, শ্যান্টন ট্রাস্ট,ম্যারিনা ট্রাস্ট, মিশন ট্রাস্ট । এর মধ্যে ম্যাপল ট্রাস্টের মূল্য ২১ কোটি ডলার।
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর দেশে প্রকাশ্যে দেখা যায়নি চট্টগ্রামভিত্তিক ব্যবসায়ী গোষ্ঠী এস আলম গ্রুপের প্রধান সাইফুল আলমকে (এস আলম)।
বিগত সরকারের সময়কার আলোচিত ও প্রভাবশালী এই ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে ব্যাংক খাতের অর্থ লুটপাটসহ অনেক অভিযোগ রয়েছে।
গত ১৭ জুন সাইফুল আলম ও তার স্বার্থ সংশ্লিষ্টদের নামে থাকা ১৮০ কোটি ৬১ লাখ টাকা মূল্যের দুইশো একর জমি জব্দের আদেশ দেয় আদালত।
এর আগে গত ২৩ এপ্রিল সাইফুল আলম এবং তার স্বার্থ সংশ্লিষ্টদের নামে ঢাকা ও চট্টগ্রামে থাকা ৪০৭ কোটি টাকার ১৫৯ দশমিক ১৫ একর জমি জব্দের আদেশ দেয় একই আদালত।
গত ১৭ এপ্রিল এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলম ও তার স্বার্থ সংশ্লিষ্টদের নামে থাকা এক হাজার ৩৬০ টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের আদেশ দেওয়া হয়।
এসব হিসাবে দুই হাজার ৬১৯ কোটি সাত লাখ ১৬ হাজার টাকা রয়েছে। তার আগে গত বছরের ৭ অক্টোবর এস আলম ও তার স্ত্রী ফারজানা পারভীনসহ তার পরিবারের ১২ সদস্যের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেয় আদালত।
ইসলামী ব্যাংকের সাবেক ১০ কর্মকর্তার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
এস আলম গ্রুপের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে নিয়ম বহির্ভূতভাবে ঋণ দিয়ে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে ইসলামী ব্যাংকের সাবেক ১০ কর্মকর্তার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার আদেশ দিয়েছে আদালত।
দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর জেষ্ঠ্য বিশেষ জজ মো. জাকির হোসেন গলিবের আদালত এই আদেশ দেয়।
নিষেধাজ্ঞা পাওয়া কর্মকর্তারা হলেন, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ মনিরুল মাওলা, ইসলামী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের সাবেক ডিএমডি মিফতাহ উদ্দিন আহমেদ, সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ ইহসানুল ইসলাম, সাবেক অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও আহ্বায়ক মুহাম্মদ কায়সার আলী।
সাবেক সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ও সাবেক শাখা প্রধান মুহাম্মদ সিরাজুল কবির, রংপুর জোনের সাবেক সিনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট (এসভিপি) মোহাম্মদ মোস্তাক আহমেদ, এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট আহমেদ জুবায়েরুল হক, ইসলামী ব্যাংকের সাবেক কর্মকর্তা এস এম তানভির হাসান ও হোসেন মোহাম্মদ ফয়সাল।
দুদকের সহকারী পরিচালক (জনসংযোগ) মো. তানজির আহমেদ এ তথ্য জানান।
এদিন তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করেন দুদকের উপপরিচালক তাহাসিন মুনাবীল হক।
আবেদনে বলা হয়, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য টিম গঠন করা হয়েছে। অভিযোগ অনুসন্ধান করতে গিয়ে জানা যায়, এস আলমের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে নিয়মবহির্ভূতভাবে ঋণ প্রদানে সহায়তা করা ইসলামী ব্যাংকের অভিযুক্ত কর্মকর্তারা দেশত্যাগ করার চেষ্টা করছেন।
তারা বিদেশে চলে গেলে অনুসন্ধান কাজ ব্যাহত হতে পারে। এজন্য তাদের বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া আবশ্যক।