Logo
শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫, ১২:৪৮ পূর্বাহ্ন

চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী শেরশাহ দিঘী এখন ভুমিদস্যুদের দখলে

শেরশাহ

গুগল ম্যাপে দেখালেও বাস্তবে অস্তিত্ব নেই!
বাড়ি নির্মান করে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে দখলদাররা

দখল ভরাটে বিলীন হয়ে যাচ্ছে চট্টগ্রাম নগরীর বায়েজিদ থানাধীন গণপূর্ত বিভাগের মালিকানাধীন শেরশাহ কলোনী দিঘী। ঐতিহাসিক দিঘীটি উদ্ধারের দাবী জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দা ও পরিবেশ কর্মীরা।

বিরাট দিঘীর চারপাশ ও দিঘীল অংশ দখলকরে দখলদাররা ভাড়া বাড়ি নির্মান করে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।

তারা চারপাশ এমন ভাবে দখল করেছে বাহির থেকে কেউ বলতে পারবে না এখানে শত বছরের ঐতিহ্যবাহী এই দিঘী ছিল।

অথচ এক সময় দিঘীর পাড় এবং আশে পাশে সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্য ছিল। দিঘীটি এলাকার জনমানুষের মিঠা পানির চাহিদা পূরন করতো। আগুনের কোন দূর্ঘটনা হলে এখান থেকে ফায়ার সার্ভিসের লোকেরা পানি সংগ্রহ করে আগুন নির্বাপন করতো।

বর্তমানে সে অবস্থা মোটেও নেই। বাস্তবে অস্তিত্ব হারালেও গুগল ম্যাপে দিঘীর পূর্নাঙ্গ ম্যাপ দেখা যায়।

জানা যায়, ২০২৩ সালের ৭ই ডিসেম্বর সকাল আটটায় দিঘীর পাড় কলোনীতে আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। সেসময় ফায়ার সার্ভিস টিম পানির জন্য গুগলে চার্জ করে এখানে একটা দিঘী দেখলেও বাস্তবে কোন দিঘী খুজে পায় নাই।

সে সময় দিঘীর চারপাশের দখলদারদের মধ্যখানে ছোট একটা ডোবা থাকলেও তারা সেই ডোবা থেকে পানি উত্তোলন করতে ব্যর্থ হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একজন বাসিন্দা বলেন, এই দিঘী এলাকার সৌন্দর্য। সকাল-বিকাল শত শত মানুষ এই দিঘীর পাড়ে এসে তাদের অবসর সময় কাটাতো। অনেকে প্রাণ ভরে গোসল করতে পারতো।

এলাকার ছেলেরা সাঁতার শিখা, সাঁতার কেটে বিনোদন নিতো। সেই ঐতিহ্যবাহী সরকারী দিঘীটি আজ ভুমিদস্যুদের হাতে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।

যদিও বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫—এ পরিষ্কার বলা আছে, দিঘী বা জলাধার হিসাবে চিহ্নিত জায়গা ভরাট করা যাইবে না।

এছাড়া”প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ আইন ২০০০ অনুযায়ী, কোনো পুকুর, জলাশয়, নদী, খাল ইত্যাদি ভরাট করা বেআইনি।

আইনের ৫ ধারা অনুযায়ী, প্রাকৃতিক জলাধার হিসেবে চিহ্নিত জায়গার শ্রেণি পরিবর্তন বা অন্য কোনোভাবে ব্যবহার, ভাড়া, ইজারা বা হস্তান্তর বেআইনি।

কোনো ব্যক্তি এ বিধান লঙ্ঘন করলে আইনের ৮ ও ১২ ধারা অনুযায়ী পাঁচ বছরের কারাদন্ড বা অনধিক ৫০ হাজার টাকা অর্থদন্ড অথবা উভয়দন্ডে দন্ডিত হবেন। একইসঙ্গে পরিবেশ সংরক্ষণ আইন (২০১০ সালে সংশোধিত) অনুযায়ী, যেকোনো ধরনের জলাশয় ভরাট করা নিষিদ্ধ।

অন্যদিকে ২০০০ সালের ২২ মে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের তৎকালীন মুখ্যসচিব স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে বলা হয়, “কোনো অবস্থাতেই খাল—বিল, নদী—নালা, পুকুর ও প্রাকৃতিক জলাশয়ের স্বাভাবিক গতি ও প্রকৃতি পরিবর্তন করা যাবে না। এমনকি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নকালে খাল—বিল, পুকুর, নালাসহ প্রাকৃতিক জলাশয়/জলাধার বন্ধ করা যাবে না।”

সরেজমিনে দিঘী এলাকা পরিদর্শণ করে স্থানীয় জনগণের সাথে কথা বলে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে এই গুরুত্বপূর্ণ দিঘী ফিরে পেতে চান এলাকাবাসী। যারা দখল করে আছে তারা প্রভাবশালী হওয়ায় অনেকে বিভিন্ন ঝামেলা পোহাতে হবে মনে করে মুখ খুলতে পারছেন না। আবার অনেকে আন্দোলন সংগ্রাম অব্যাহত রেখেছে।

স্থানীয় কয়েকজন অভিযোগ করে বলেন, দিঘীটি উদ্ধারের জন্য বার বার গণপূর্ত বিভাগগে অভিযোগ দিলেও এই বিষয়ে কোন উদ্যোগ গ্রহন করা হয়নি। এত অভিযোগের পরেও কার স্বার্থে গণপূর্ত এই দিঘীটিকে ধ্বংস করার সুযোগ করে দিল তা জানা প্রয়োজন।

এই বিষয়ে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি বেলা চট্টগ্রামের সমন্বয়ক মুনীরা পারভীন বলেন, দীর্ঘদিন থেকে দিঘীটি দখল ও ভরাট হচ্ছে। গণপূর্ত বিভাগ এই বিষয়ে নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে চলেছে। তাদের দায়িত্ব এই জনগণের এই সম্পদ রক্ষা করা।

তিনি বলেন, অচিরেই দিঘীর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের জন্য আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানাবো। তারা যথা সময়ে কাজ না করলে প্রয়োজনীয় আইনি উদ্যোগ গ্রহন করা হবে।

এই বিষয়ে বেলা নেটওয়ার্ক মেম্বার ও জ্যৈষ্ঠ সাংবাদিক আলীউর রহমান বলেন, আমরা সরেজমিনে দিঘীটি পরিদর্শন করেছি। চারিদিক থেকে দিঘীটি এমনভাবে দখল ও ভরাট করা হয়েছে এখানে দিঘীর অস্তিত্ব খুজে পাওয়াট কঠিন।

এই দিঘী উদ্ধার হলে এলাকার পরিবেশ প্রতিবেশ এর দৃশ্য পাল্টে যাবে। দিঘীটি উদ্ধারে এলাকাবাসী একাট্টা কিন্তু দখলবাজদের ক্ষমতার দাপটে তারা অসহায়।

এই বিষয়ে কথা বলতে গণপূর্ত বিভাগ চট্টগ্রাম কার্যালয়ে একাধিকবার সরেজমিন গিয়ে অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীকে পাওয়া যায়নি।

সর্বশেষ ১৭ জুন মঙ্গলবার সকাল ১১ টায় যোগাযোগ করা হলে অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ও নির্বাহী প্রকৌশলীদের কেউ কার্যালয়ে উপস্থিত নাই বলে জানানো হয়।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


ফেসবুক পেইজ