আহমেদাবাদে এয়ার ইন্ডিয়ার ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনায় যখন সবাই ধরে নিয়েছিলেন, কেউ আর বেঁচে নেই—তখনই এক হৃদয়বিদারক অথচ আশাব্যঞ্জক ভিডিও ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।
বিধ্বস্ত হওয়া বিমানের এক যাত্রী নিজে হেঁটে অ্যাম্বুলেন্সে উঠতে দেখা গেছে, যা সবাইকে অবাক করেছে।
ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা গেছে, ১১/এ নম্বর সিটের যাত্রী রমেশ (৩৮) ধীরে ধীরে খুঁড়িয়ে হাঁটছেন। তার পরনে ছিল সাদা টি-শার্ট ও কালো প্যান্ট, যা ধুলো, ময়লা ও রক্তে মাখা।
আশপাশের মানুষজন তাকে ঘিরে ধরে অন্য যাত্রীদের খোঁজ জানতে চাইছিলেন। কিন্তু রমেশ ধীরে ধীরে হেঁটে অ্যাম্বুলেন্সের দিকে চলে যান।
পুলিশের প্রাথমিক ঘোষণায় বলা হয়েছিল, ঘটনাস্থলে কেউ জীবিত নেই। কিন্তু ঘটনার ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যেই আহমেদাবাদ পুলিশ নিশ্চিত করে, একজন যাত্রীকে জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে।
সেই মুহূর্তই ক্যামেরাবন্দি হয় এবং ভিডিওটি ভাইরাল হয়।
লন্ডনগামী এআই১৭১ ফ্লাইটটি আহমেদাবাদ থেকে উড্ডয়ন করেছিল দুপুর ১টা ১৭ মিনিটে। বিমানে ছিলেন ২৪২ জন যাত্রী ও ক্রু সদস্য।
উড্ডয়নের কিছুক্ষণের মধ্যেই, মাত্র ৮২৫ ফুট উচ্চতায় পৌঁছে বিমানটি হঠাৎ করেই নিচে নামতে শুরু করে।
পাইলট থেকে একটি ‘Mayday’ সংকেত পাওয়ার কিছুক্ষণ পরই কন্ট্রোল টাওয়ারের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
এরপরই আকাশে একটি বিশাল বিস্ফোরণ ঘটে এবং বিমানটি মেঘানি এলাকায় বিধ্বস্ত হয়। বিস্ফোরণের ফলে কুণ্ডলীকৃত কালো ধোঁয়া কয়েক মাইল দূর থেকেও দেখা গেছে।
উড্ডয়নের কিছুক্ষণের মধ্যেই বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনারটি শহরের মেঘানি নগর এলাকায় একটি মেডিকেল কলেজের হোস্টেলের ওপর বিধ্বস্ত হয়। সঙ্গে সঙ্গে আগুন ধরে যায় এবং ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের এলাকায়।
বিমানে মোট ২৪২ জন আরোহী ছিলেন। যাত্রীদের মধ্যে ১৬৯ জন ছিলেন ভারতীয়, ৫৩ জন ব্রিটিশ, ৭ জন পর্তুগিজ, ১ জন কানাডিয়ান নাগরিক। এছাড়া ২ জন পাইলট ও ১০ জন কেবিন ক্রু ছিলেন।
ভারতীয় পুলিশের তথ্যমতে, দুর্ঘটনায় ২৪১ জনের মৃত্যু হয়েছে, শুধুমাত্র রমেশ বেঁচে গেছেন। রমেশের বেঁচে ফেরা এ মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় আশার আলো হয়ে এসেছে। এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত বহু মানুষের মৃত্যু নিশ্চিত হয়েছে এবং অনেকেই নিখোঁজ রয়েছেন।
তবে রমেশের মতো কেউ যদি ভয়াবহতার মাঝেও প্রাণে বেঁচে ফিরতে পারেন, তা নিঃসন্দেহে অলৌকিক বলে বিবেচিত হচ্ছে।
উদ্ধার অভিযান এখনও চলছে। ঘটনাস্থলে মোতায়েন রয়েছে জরুরি সেবা বাহিনী, চিকিৎসক দল ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
হিন্দুস্তান টাইমসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে রমেশ বলেন, ‘উড্ডয়নের ৩০ সেকেন্ড পর হঠাৎ বিকট এক শব্দ। তারপর মুহূর্তেই সবকিছু অন্ধকার। খুব দ্রুত ঘটে গেল সব কিছু। যখন চোখ খুললাম, দেখলাম চারপাশে শুধু মৃতদেহ আর বিমানের ছিন্নভিন্ন অংশ। ভয় পেয়ে গেলাম। উঠে দৌঁড় দিলাম।’
তিনি জানান, আমি কয়েক দিনের জন্য ভারতে এসেছিলাম পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে। আমার ভাইও একই বিমানে ছিল, অন্য একটি সারিতে। কিন্তু এখন তাকে খুঁজে পাচ্ছি না। অনুরোধ করছি— কেউ যদি কিছু জানেন, দয়া করে আমাদের জানাবেন।
উদ্ধারের সময় রমেশের পরনে ছিল সাদা টি-শার্ট ও কালো ট্রাউজার, যা রক্তে ভিজে গিয়েছিল। তার মুখ ও কপাল ছিল আহত, তাতে স্পষ্ট জখমের চিহ্ন। তাকে দ্রুত অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে নেওয়া হয়।
দুর্ঘটনার পর এক্স (সাবেক টুইটার)-এ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি লিখেছেন, আহমেদাবাদের দুর্ঘটনা আমাদের হতবাক ও শোকাহত করেছে।
এটি ভাষায় প্রকাশের বাইরে। এই দুঃখের সময়ে নিহত ও ক্ষতিগ্রস্তদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাই।