গেল চার মাসে সারাদেশেই চুরি-ছিনতাই-ডাকাতির মামলা হয়েছে। এরমধ্যে এক বিভাগেই অন্তত ৩৯০টি মামলা রেকর্ড হয়েছে। অর্থাৎ রাজশাহী বিভাগে গড়ে প্রতি মাসে এ ধরনের প্রায় একশ অপরাধের ঘটনা ঘটেছে।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিতে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে স্থানীয় বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীদের মাঝে। তবে অপরাধ নিয়ন্ত্রণে সর্বোচ্চ তৎপরতার আশ্বাস দিয়েছে পুলিশ।
পুলিশের তথ্য বলছে, রাজশাহী বিভাগে জানুয়ারি মাস থেকে এপ্রিল পর্যন্ত চুরি, ডাকাতি, ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে চার শতাধিক। এসব ঘটনায় এ চার মাসে মামলা হয়েছে অন্তত ৩৯০টি।
ডাকাতির ঘটনাই ঘটেছে ২৯টি আর সবচেয়ে বেশি হয়েছে সিরাজগঞ্জে। ২৮৪টি চুরির ঘটনার মধ্যে ৫৪টি হয়েছে বগুড়ায়। দস্যুতার দিক থেকেও এগিয়ে এই জেলা। প্রতি মাসেই এ ধরনের অপরাধের ঘটনায় আতঙ্কে স্থানীয়রা।
স্থানীয় এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘এ বিষয়ে পুলিশকে অবহিত করা হলে তারা সবাই তদন্ত করে। এখন পর্যন্ত আমরা চোরের সন্ধান পাই নাই বা কোনো অগ্রগতিও হয়নি।
পুলিশের অনেক প্রচেষ্টার পরও কোনো সুরাহা হয়নি। আমরা যারা ব্যবসায়ী রয়েছি, সবসময়ই আমরা আতঙ্কিত থাকছি।’
স্থানীয় আরেক বাসিন্দা বলেন, ‘আমার নিজের বাড়িতে মোবাইল টাকা পয়সা চুরি হয়ে গেছে থানায় অভিযোগ দিয়েছি। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি।’
বিশ্লেষকেরা বলছেন, প্রশাসনের দুর্বলতার সুযোগ নিচ্ছে অপরাধীরা। ক্রমেই বাড়ছে কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য। এর পেছনে কিছু দলের ইন্ধনেরও অভিযোগ রয়েছে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘৫ আগস্ট এর পরে বাংলাদেশের কনটেস্টে যেটি দেখা গেছে যে প্রশাসনের অসহযোগিতা, তারপরও যেটি দেখা গেছে পুলিশ প্রশাসনে দুর্বলতা।
জনসাধারণের মধ্যে এক ধরনের অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। কেউ এলে দায়িত্বশীল আচরণ করছে না। যদি আসলে গুড গভর্নেন্স বা সুশাসন থাকত তাহলে এই সমস্যাগুলো হতো না।
ইভেন বিচার ব্যবস্থার দুর্বলতা রয়েছে। দুর্বল প্রসিকিউশন ব্যবস্থা রয়েছে। এর বাইরে আছে রাজনৈতিক দলগুলোর ইন্ধন যোগানো। কিশোর গ্যাংদের পৃষ্ঠপোষকতা করা।’
পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, ৫ আগস্টের পর মনোবল হারানো বাহিনীর সদস্যরা আবারও সক্রিয় হয়ে মাঠে নেমেছেন। অপরাধ নিয়ন্ত্রণে সর্বোচ্চ তৎপরতা রয়েছে তাঁদের।
রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, ‘অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করা যায় নির্মূল করা যায় না। আমরা চেষ্টা করি দেশের বিদ্যমান আইন ও বিধির আলোকে আমরা অপরাধীকে আইনি প্রক্রিয়ায় যেন বিচারের আওতায় নিয়ে আসা যায়। আমাদের তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।’