উপকূলীয় অঞ্চলকে উৎপাদনমুখী মুক্ত বাণিজ্যিক অঞ্চলে পরিণত করতে মাতারবাড়ি অঞ্চলে দ্রুত অবকাঠামোগত উন্নয়নের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
মাতারবাড়িকে বন্দর, সরবরাহ, উৎপাদন এবং জ্বালানির জন্য দেশের বৃহত্তম কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ানোর তাগিদও দিয়েছেন তিনি।
মঙ্গলবার (২৭ মে) ঢাকার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এক উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে মহেশখালী-মাতারবাড়ী সমন্বিত অবকাঠামো উন্নয়ন উদ্যোগ (এমআইডিআই) এর অগ্রগতি পর্যালোচনা করেন অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের পাঠানো এক বার্তায় বিষয়টি জানানো হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, উপকূলীয় অঞ্চলকে বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় উৎপাদন ও রপ্তানিমুখী মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চলে রূপান্তর করা হবে।
আমরা মাতারবাড়ীকে দেশের বৃহত্তম বন্দর, সরবরাহ, উৎপাদন এবং জ্বালানির কেন্দ্র হিসেবে কল্পনা করি। এই দৃষ্টিভঙ্গি বাস্তবায়নের জন্য, আমাদের অবশ্যই উল্লেখযোগ্য বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে হবে।
তিনি এই খাতে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের আগ্রহের কথা তুলে ধরেন এবং এই ধরনের বিনিয়োগ সহজতর করার জন্য একটি মাস্টারপ্ল্যানের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
প্রধান উপদেষ্টা সড়ক পরিবহন ও নৌপরিবহন সচিবদের মহেশখালী-মাতারবাড়ী সমন্বিত অবকাঠামো উন্নয়ন উদ্যোগ অঞ্চলকে দেশের অন্যান্য অংশের সঙ্গে সংযুক্ত রাস্তা নির্মাণ ত্বরান্বিত করার এবং বৃহৎ সমুদ্রগামী কন্টেইনার জাহাজগুলোকে ধারণ করতে সক্ষম টার্মিনাল তৈরির নির্দেশ দেন।
তিনি মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল এবং সংশ্লিষ্ট শিল্পগুলোতে শ্রমিকদের প্রত্যাশিত আগমনকে সমর্থন করার জন্য একটি পরিকল্পিত শহর নির্মাণসহ এলাকার নগর উন্নয়নের গুরুত্বের ওপরও জোর দেন।
অধ্যাপক ইউনূস ঘোষণা করেছেন, ২৮ মে থেকে শুরু হতে যাওয়া তার আড়াই দিনের জাপান সফরে এমআইডিআই অঞ্চলের উন্নয়নে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হবে।
৩০ মে টোকিওতে অনুষ্ঠিত ৩০তম নিক্কেই ফিউচার অব এশিয়া সম্মেলনে যোগদান এবং জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা করার কথা রয়েছে, যার লক্ষ্য গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলোর জন্য তহবিল নিশ্চিত করা।
বৈঠকে এমআইডিআই অঞ্চলের মধ্যে জাপানের দ্বিতীয় একচেটিয়া জাপানি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার ইচ্ছাও প্রকাশ করা হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার হলো প্রথম জাপানি অর্থনৈতিক অঞ্চলের স্থান। এটি এরইমধ্যে উল্লেখযোগ্য বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করেছে।
এছাড়াও সৌদি আরবের পেট্রোকেমিক্যাল জায়ান্ট আরামকো, আবুধাবি পোর্টস, সৌদি আরবের বন্দর অপারেটর রেড সি গেটওয়ে, জাপানি বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী জেরা এবং মালয়েশিয়ার পেট্রোকেমিক্যাল কোম্পানি পেট্রোনাস-সহ বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক কোম্পানি এই অঞ্চলে বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
সম্প্রতি মাতারবাড়ীতে দেশের প্রথম গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণের জন্য জাপানি সংস্থা পেন্টা-ওশান কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড এবং টিওএ কর্পোরেশনের সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে।
জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা) দ্বারা সমর্থিত এই প্রকল্পটি এমআইডিআই উদ্যোগের একটি ভিত্তিপ্রস্তর এবং এই অঞ্চলের সংযোগ এবং অর্থনৈতিক সম্ভাবনা বৃদ্ধি করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এমআইডিআই উদ্যোগটি মহেশখালী-মাতারবাড়ি অঞ্চলকে একটি কৌশলগত অর্থনৈতিক করিডোরে রূপান্তরিত করার জন্য বাংলাদেশ এবং জাপানের মধ্যে একটি সহযোগিতামূলক প্রচেষ্টার প্রতিনিধিত্ব করে, যা সরবরাহ, জ্বালানি এবং শিল্প উন্নয়নকে একীভূত করে।
প্রধান উপদেষ্টার মুখ্যসচিব মো. সিরাজ উদ্দিন মিয়ার সভাপতিত্বে এবং এসডিজি সমন্বয়কারী লামিয়া মোর্শেদ, সড়ক পরিবহন, নৌপরিবহন, জ্বালানি, বিদ্যুৎ এবং স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিবরা উপস্থিত ছিলেন।
মহেশখালী-মাতারবাড়ী সমন্বিত অবকাঠামো উন্নয়ন উদ্যোগ (এমআইডিআই) সেলের মহাপরিচালক সারওয়ার আলম চলমান প্রকল্পগুলোর একটি বিস্তৃত পর্যালোচনা উপস্থাপন করেন।