চট্টগ্রামের বাজারে বেড়েছে বেশিরভাগ কাঁচাসবজি ও চালের দাম। এ সপ্তাহে কয়েক পদের সবজি দাম বেড়ে পার হয়েছে শতকের ঘর।
এদিকে কোরবানির ঈদের পর প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে বেশির ভাগ মিনিকেট চালের দাম কেজিতে ৫/৬ এবং মোটা ও মাঝারি চালের দাম কেজিতে দুই টাকা পর্যন্ত বেড়ে গেছে।
এছাড়াও মাছের বাজার এবং পাকিস্তানি মুরগির দামেও চড়া ভাব লক্ষ্য করা গেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে এবং আজ শুক্রবার (২৭ জুন) সকালে চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার মুন্সেফ বাজারসহ শহরের বেশকিছু বাজার ঘুরে দেখা যায়, সবজির দামে কিছুটা বাড়তি প্রবণতা রয়েছে। কয়েক পদের সবজির দাম বেশ ঊর্ধ্বগতি।
বিক্রেতারা দাম বাড়ার যুক্তি দেখিয়ে বলছেন, বর্ষা মৌসুমে অনেক সবজির উৎপাদন হয় না। যেগুলো উৎপাদিত হয় সেগুলোরও সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে বৃষ্টির কারণে। ফলে চাহিদার চেয়ে সবজির সরবরাহ কমে গেছে। এতেই দাম চড়ছে।
বৃহস্পতিবার রাতে নগরীর কয়েকটি সবজির বাজারে গিয়ে দেখা যায়, প্রতি কেজি টমেটো ১১০-১৪০ টাকা, বরবটি, কাঁকরোল ও কাঁচা মরিচ ৭০-১০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এগুলোর দাম সপ্তাহখানেক আগে কেজিতে ১০-২০ টাকা কম ছিল।
এছাড়া প্রতি কেজি পটোল, ধুন্দল, চিচিঙ্গা ও ঢ্যাঁড়স ৩০-৫০ টাকা এবং বেগুন ৬০-১০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। আলুর দামও বাড়তি রয়েছে। প্রতি কেজি আলু এখন ২৪-২৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা ঈদের আগে কেজি ২০ টাকারও নিচে ছিল।
ব্যবসায়ীদের সাথে কথা হলে তারা জানায়, গত কয়েক দিনের ব্যবধানে চট্টগ্রামের স্থানীয় হাট-বাজারগুলোতে হঠাৎ-ই সবজির সরবরাহ কমে গেছে। ফলে চাহিদার তুলনায় যোগান কমায় বেশিরভাগ সবজির দাম কেজিতে ১০-১৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
কারণ হিসেবে তারা বলছেন, গত কয়েক দিনের বৃষ্টিতে জমিতে সবজি নষ্ট হওয়ার উপক্রম হওয়ায় এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। আবহাওয়া স্বাভাবিক হলে বাজারও আস্তে আস্তে কমতে শুরু করবে।
মুদি দোকানগুলোতে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫৫-৬০ টাকায়। এ ছাড়া টিসিবির হিসাবে এক সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে আমদানি করা রসুন, আদা, দারুচিনি ও এলাচের দাম কিছুটা কম আছে। আদার কেজি ১০০ থেকে ১২০ আর রসুন বিক্রি হচ্ছে মানভেদে ১৮০ থেকে ২০০ টাকা কেজিতে।
বাজারগুলোতে প্রতি পাঁচ লিটার বোতলজাত তেল ৯২০, তিন লিটার ৫৬৫, চিনি ১১০, আটা প্রতি প্যাকেট ৫০, ময়দা ৬৫, লবন ৪০ টাকা এবং মসুরের ডাল ১১০/১৪০, মুগ ডাল ১৪০/১৮০ ও খেসারি ডাল ১১০ টাকা কেজিতে বেচাকেনা হতে দেখা যায়।
এদিকে গত কয়েক সপ্তাহ হলো বাজারে বেড়েছে বেশিরভাগ চালের দাম। তবে মোটা চালের তুলনায় সরু চালের দাম বেশি বেড়েছে। সরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশনের (টিসিবি) হিসাবে চলতি সপ্তাহে মানভেদে কেজিপ্রতি ৩ টাকা বেড়েছে চালের দাম।
টিসিবির প্রতিবেদনে বলা হয়, বাজারে গত সপ্তাহে যে সরু চালের দাম ছিল ৮২ টাকা কেজি, তা চলতি সপ্তাহে ৮৫ টাকায় উঠেছে। এ ছাড়া মোটা চালের দামও ৩ টাকা বেড়ে ৫৮ টাকায় উঠেছে।
চালের খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, ধানের বাড়তি দামের অজুহাতে মোকামেই চালের দাম বেশি, ফলে এর প্রভাব পড়েছে খুচরা পর্যায়ে।
খুচরা দোকানগুলোতে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের প্রতি কেজি মিনিকেট চাল ৮০ থেকে ৮২ টাকায় বিক্রি হয়েছে। ঈদের আগে এসব চালের দাম ছিল ৭৫-৭৬ টাকা কেজি। অর্থাৎ কেজিতে দাম বেড়েছে ৫-৬ টাকা। ভাল মানের মিনিকেট বিক্রি হচ্ছে ৮৫-৯০ টাকা কেজি, যা ঈদের আগে ৮০ টাকার আশপাশে ছিল।
এদিকে সরু চালের দাম বাড়ার প্রভাবে মোটা এবং মাঝারি চালের দামও কেজিতে দুই টাকার মতো বেড়েছে।
চাল কিনতে আসা সরকারি চাকরিজীবি রইসূল ইসলাম জানান, এক ধাক্কায় চালের দাম কেজিতে ৫-৬ টাকা বৃদ্ধি পাওয়ায় আমাদের চিন্তা বেড়েছে। কারণ, চালের দাম বেশি বাড়লে অন্যান্য নিত্যপণ্যের দামও বাড়তে দেখা যায়।
বাজারে ব্রয়লার মুরগির দাম অনেকটা আগের সপ্তাহের মতো রয়েছে। কেজি প্রতি সামান্য বেড়েছে পাকিস্থানি মুরগিতে। শুক্রবার সকালে ব্রয়লার মুরগি ১৪৫-১৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। ডিমের দাম ডজন ১২০-১২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে পাড়া-মহল্লার দোকানগুলোতে।
বাজারে মাছের দামেও তেজিভাব লক্ষ্য করা গেছে। গত এক মাসে মাছের দাম কেজিপ্রতি ৩০-৫০ টাকা বেড়েছে। গতকাল চট্টগ্রামের বিভিন্ন বাজারে ছোট ও মাঝারি রুই এবং কাতলা মাছ বিক্রি হয়েছে ২৮০-৩৮০ টাকা কেজিতে, যা কিছুদিন আগেও ছিল ২৫০-৩৩০ টাকা। তেলাপিয়া মাছ বিক্রি হয়েছে ১৮০-২৫০ টাকা কেজি দরে। দুই থেকে আড়াই কেজি ওজনের সিলভার কার্প মাছ ২০০ থেকে ২২০ টাকা কেজি।
বাজারের মাছ বিক্রেতারা বলেন, বর্ষার ও বৃষ্টির পানি ঢুকে পড়ায় অনেক খামারি পুকুরের মাছ তুলে আগেই বিক্রি করে দিয়েছেন। তাই চাষের মাছের সরবরাহ এখন কিছুটা কম। দামও একটু বেশি।
এছাড়াও দেড় কেজি ওজনের ইলিশ মাছ দুই হাজার টাকার ওপরে এবং ছোট আকারের ইলিশ ৬০০ থেকে ৭৫০ টাকা কেজিতে বেচাকেনা হয়।