চট্টগ্রামের শীর্ষ সন্ত্রাসী কারাবন্দি সাজ্জাদ হোসেন ওরফে ছোট সাজ্জাদের স্ত্রী শারমীন আক্তার তামান্না হাইকোর্টে আগাম জামিন পেয়েছেন।
মঙ্গলবার (৯ এপ্রিল) বিচারপতি মো. মাহবুব উল আলম এবং বিচারপতি মো. হামিদুর রহমানের আদালত তার আগাম জামিন আবেদন মঞ্জুর করেন।
জানা গেছে, গত ১৫ মার্চ ঢাকার একটি শপিং মল থেকে সাজ্জাদকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের পর তার স্ত্রী শারমীন আক্তার তামান্না আদালত ও জামিন নিয়ে বেশ কিছু বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন।
তার স্ত্রী শারমীন আক্তার তামান্না ‘কাড়ি কাড়ি টাকা দিয়ে আদালত ও জামিন’ কিনে নেয়ার কথা বলে দেশের আইন ও নিরাপত্তা সংস্থাকে রীতিমতো অপমানের চূড়ান্ত করেছেন বলে মন্তব্য করেছেন আল জাজিরার সাংবাদিক জুলকার নাইন সায়ের।
আজ বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) এক ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে সায়ের একথা জানান। সায়ের তার পোস্টে বলেন, তামান্নাকে আজ আগাম জামিন দিয়েছে হাইকোর্ট।
তিনি তার পোস্টে আরো বলেন, আশ্চর্য্যের বিষয় হলো আজ বিজয় ৭১ ভবনের ২৫ নম্বর কোর্টে (৯ম তলায়, বিচারপতি মো মাহবুব উল আলম এবং বিচারপতি মোঃ হামিদুর রহমান পরিচালিত) ৫৪৭টি মামলার আগাম জামিনের শুনানি থাকলেও দুপুর ১.১৫ মিনিট পর্যন্ত সিরিয়াল নম্বর ১৫০ পর্যন্ত শুনানি চলে, এবং তারপরই বিচারক, সাজ্জাদের স্ত্রী’ শারমীন আক্তার তামান্না’র মামলায় চলে যান এবং ১ মিনিটের মধ্যেই জামিন মঞ্জুর করে দেন। এরপর তিনি দ্রুততার সাথে আরো কয়েকটি মামলার শুনানি শেষ করেন।
হাইকোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্য বলছে, এই কোর্ট ৫৪৭ টির মধ্যে মাত্র ৬৩টি মামলার শুনানি করেন আজ এবং ২০ এপ্রিলের আগে আজই কোর্টের শেষ কার্যদিবস ছিলো।
একই আদালত আজ আওয়ামী লীগের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নেতা-কর্মীকেও আগাম জামিন দেয় বলে সূত্রের বরাতে জানা যায়।
সাধারণত আদালত গুরুত্ব বিবেচনায় অর্থাৎ সচরাচর কারো জটিল রোগ বা আপনজন মারা গেলে তখল মূল সিরিয়াল ভেঙ্গে যে কোন একটি সিরিয়ালের মামলা ধরতে পারে।
কিন্তু ১৫০’র পর, ৪৬৩ নম্বরে থাকা তামান্না পারভিনের মামলা ঠিক কোন যৌক্তিকতায় ১ মিনিটে শুনানি শেষ করে আগাম জামিনের সিদ্ধান্ত দিয়ে দেয়া হলো? যা সাধারণত আদালতের কাজের ধারার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
এ বিষয়ে বেশ কিছু প্রশ্ন উঠছে আদালত ও বিচার ব্যবস্থার কার্যক্রম নিয়ে। তামান্নার মামলার শুনানি দ্রুততার সঙ্গে মঞ্জুর হওয়ার পর, বিষয়টি নিয়ে নানা রকমের আলোচনা শুরু হয়েছে, বিশেষ করে রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিবেশে।
উল্লেখ্য : গত ১৫ মার্চ ঢাকার একটি শপিং মল থেকে সাজ্জাদকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এর আগে ২৯ জানুয়ারি তাকে ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করেন চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ কমিশনার হাসিব আজিজ।
তার আগের দিন সাজ্জাদ বায়েজিদ বোস্তামী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) ফেসবুক লাইভে এসে পেটানোর হুমকি দেন। এর আগে গত বছরের ২১ অক্টোবর চান্দগাঁও শমসেরপাড়ায় ইট-বালু ব্যবসায়ী আফতাব উদ্দিনকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় করা মামলায় সাজ্জাদ ও তার সহযোগীরা আসামি।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সাজ্জাদ বায়েজিদ বোস্তামী, হাটহাজারী, রাউজান ও ফটিকছড়ি পাহাড়ি এলাকায় সক্রিয় ছিলেন। তার দলের কাছে দেশীয় ও বিদেশি অস্ত্র রয়েছে। সাজ্জাদের বিরুদ্ধে হত্যা ও অস্ত্রসহ প্রায় দেড় ডজন মামলা রয়েছে।
এদিকে সাজ্জাদকে গ্রেপ্তারের পর চট্টগ্রামে জোড়া খুনের ঘটনা ঘটে। বায়েজিদ বোস্তামী এলাকার তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী সরোয়ার হোসেন বাবলার সঙ্গে সাজ্জাদের বিরোধ ছিল।
এই বিরোধের জেরে গত ৩০ মার্চ বাকলিয়া এক্সেস রোডে প্রাইভেটকারে হামলার ঘটনায় জোড়া খুনের ঘটনা ঘটে। ঘটনায় গত ১ এপ্রিল চট্টগ্রামের বাকলিয়া থানায় নিহত বখতিয়ার হোসেন মানিকের মা ফিরোজা বেগম একটি মামলা দায়ের করেন।
মামলায় চট্টগ্রামের শীর্ষ সন্ত্রাসী কারাবন্দি সাজ্জাদ হোসেন ওরফে ছোট সাজ্জাদ ও তার স্ত্রী তামান্না শারমিনকে মামলায় হুকুমের আসামি করা হয়।
সাজ্জাদ বর্তমানে চান্দগাঁও থানার ইট, বালু ব্যবসায়ী আফতাব উদ্দিন খুনের মামলায় রিমান্ডে পুলিশি হেফাজতে রয়েছেন। সাজ্জাদকে ধরিয়ে দেওয়ার জেরে তার অনুসারীরা সরোয়ারের সহযোগীদের ওপর হামলা চালান বলে প্রাথমিক তদন্তে জেনেছে পুলিশ।