সারাদেশের ন্যায় চট্টগ্রামেও বাংলা প্রথম পত্রের পরীক্ষার মধ্য দিয়ে বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয়েছে ২০২৫ সালের উচ্চমাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমানের পরীক্ষা।
করোনার সংক্রমণ ও ডেঙ্গু প্রতিরোধে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক এবং প্রশাসনের বাড়তি সতর্ককতা ও একাধিক নির্দেশনা মেনে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে চট্টগ্রামের প্রতিটি কেন্দ্রে পরীক্ষা দিয়েছে পরীক্ষার্থীরা।
জানা গেছে, এবারের পরীক্ষায় চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের অধীনে বাড়তি সতর্কতা নেওয়া হয়েছে। করোনার সংক্রমণ ও ডেঙ্গু প্রতিরোধে পরীক্ষার্থীদের জন্য মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক ছিল।
পরীক্ষাকেন্দ্রে প্রবেশের আগেই স্যানিটাইজার দেওয়া হয়েছে প্রতিটি পরীক্ষার্থীর হাতে। একই সঙ্গে প্রতিটি কেন্দ্রে অতিরিক্ত মাস্ক ও স্যানিটাইজার রাখারও নির্দেশনা দিয়েছিল কর্তৃপক্ষ।
চট্টগ্রাম বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক পারভেজ সাজ্জাদ চৌধুরী বলেন, শিক্ষার্থীদের মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করার পাশাপাশি কেন্দ্রেও মাস্ক ও স্যানিটাইজার রাখতে বলা হয়েছে। অভিভাবকেরা ঘর থেকে মাস্ক পরে এলে ভালো হয়।
তাছাড়া চট্টগ্রাম নগর পুলিশের নির্দেশনায় প্রতিটি কেন্দ্রের ২০০ গজের মধ্যে পরীক্ষা শুরুর এক ঘণ্টা আগে থেকে শেষের এক ঘণ্টা পর্যন্ত ১৪৪ ধারা কার্যকর ছিল।
আগের দিন গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে চট্টগ্রাম নগর পুলিশ কমিশনার হাসিব আজিজ জানিয়ে দিয়েছিলেন, পরীক্ষার সময়সূচি অনুযায়ী পরীক্ষা শুরুর এক ঘণ্টা আগে থেকে শেষ হওয়ার পরবর্তী এক ঘণ্টা পর্যন্ত পরীক্ষাকেন্দ্রের নির্ধারিত এলাকায় ১৪৪ ধারা কার্যকর থাকবে।
চট্টগ্রাম বোর্ডের আওতায় চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও তিন পার্বত্য জেলার ১১৫টি কেন্দ্রে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বোর্ডে এবার মোট পরীক্ষার্থী ১ লাখ ২ হাজার ৯৭৫ জন।
এর মধ্যে মানবিক বিভাগ থেকে ৪৬ হাজার ৭১৮, বিজ্ঞানে ২২ হাজার ৬৮৬, ব্যবসায় শিক্ষায় ৩৩ হাজার ৫৭০ ও গার্হস্থ্য বিভাগ থেকে ১ জন পরীক্ষা দিচ্ছেন।
চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের তথ্যমতে, চট্টগ্রাম নগরে চট্টগ্রাম কলেজ, সরকারি কমার্স কলেজ, সরকারি সিটি কলেজ, হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজসহ মোট ২৭টি কেন্দ্রে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ৩৫ হাজার ৫৮৪।
মহানগরসহ চট্টগ্রাম জেলায় এবার মোট পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ৭১ হাজার ৫২৩। এর মধ্যে ছাত্র ৩১ হাজার ৮৩৯ এবং ছাত্রী ৩৯ হাজার ৬৮৪।
অন্যদিকে, কক্সবাজার জেলায় পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ১২ হাজার ৫, যার মধ্যে ছাত্র ৪ হাজার ৭২২ ও ছাত্রী ৭ হাজার ২৮৪।
রাঙামাটিতে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ৫ হাজার ৫৫৪, যার মধ্যে ছাত্র ২ হাজার ৪১৬ এবং ছাত্রী ৩ হাজার ১৩৮।
খাগড়াছড়িতে ৭ হাজার ৮২ জন পরীক্ষার্থী রয়েছেন, ছাত্র ৩ হাজার ৩০৬ ও ছাত্রী ৩ হাজার ৭৭৬।
বান্দরবানে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ৩ হাজার ৮৭১, যার মধ্যে ছাত্র ১ হাজার ৮৫৬ এবং ছাত্রী ২ হাজার ১৫।
চট্টগ্রাম বোর্ড জানিয়েছে, প্রতিটি কেন্দ্রের আশপাশে মশার ওষুধ ছিটানো হয়েছে। স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিতে প্রবেশমুখে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
প্রথম দিন বাংলা প্রথম পত্র পরীক্ষা শুরু হওয়ার চট্টগ্রাম মহানগরীর বেশ কয়েকটি কেন্দ্রে পরিদর্শণ করে দেখা গেছে, শিক্ষার্থীদের সরব উপস্থিতি।
দুর-দুরান্ত থেকে স্ব স্ব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নির্ধারিত ইউনিফর্মে সজ্জিত হয়ে হাতে প্রবেশপত্র এবং পরীক্ষায় অংশ নিতে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম নিয়ে অনেকে নির্ধারিত সময়ের আগেই কেন্দ্রে হাজির হন।
পরীক্ষা চলাকালীন অপ্রীতিকর পরিস্থিতি রোধে কেন্দ্রের গেটের সামনে কক্ষ পরিদর্শক, দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষক এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সরব উপস্থিতিও লক্ষ্য করা গেছে।
কিছু কিছু কেন্দ্রে নকলবিরোধী পোস্টার এবং অ্যানালগ ঘড়ি দেখা গেছে। পরীক্ষার পরিবেশ সুষ্ঠু ও নকলমুক্ত রাখতে কঠোর ব্যবস্থা এবং প্রতিটি কেন্দ্রে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে।
জনসমাগম নিয়ন্ত্রণে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বর্ষা মৌসুমে বিদ্যুৎ বিভ্রাট এড়াতে সংশ্লিষ্ট বিভাগকে রাখা হয়েছে সতর্ক।
বোর্ড থেকে পরীক্ষার্থীদের জন্য এবার বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে পরীক্ষা শুরুর কমপক্ষে ৩০ মিনিট আগে পরীক্ষার্থীদের কেন্দ্রে পৌঁছানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়।
সায়েন্টিফিক ক্যালকুলেটর ব্যবহারের অনুমতি থাকলেও পরীক্ষার হলে মোবাইল ফোন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করে বোর্ড কর্তৃপক্ষ। পরীক্ষার্থীরা নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নয়, স্থানান্তরিত কেন্দ্রে পরীক্ষা দিচ্ছে।
ওএমআর শিটে নির্ভুলভাবে তথ্য পূরণ ও বৃত্ত রঙ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বহুনির্বাচনি ও সৃজনশীল অংশের মাঝে কোনো বিরতি থাকবে না এবং উত্তরপত্র ভাঁজ করা যাবে না।
তত্ত্বীয়, বহুনির্বাচনি (MCQ) এবং ব্যবহারিক—তিন বিভাগেই আলাদাভাবে উত্তীর্ণ হতে হবে। প্রতিটি পরীক্ষায় উপস্থিতির স্বাক্ষর দেওয়া বাধ্যতামূলক।