আকাশে ওড়ার মাত্র দুই মিনিট পরই ভেঙে পড়ল স্বপ্ন। আহমেদাবাদ থেকে লন্ডনগামী এয়ার ইন্ডিয়ার একটি বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার বিধ্বস্ত হওয়ার পর মণিপুরের থৌবাল জেলার আওয়াং লাইকেই গ্রামের ২২ বছর বয়সী এনগান্থোই শর্মা কংব্রাইলাটপামের পরিবারের কান্না থামছে না।
ঘটনার পরপরই পরিবারের সদস্যরা লাল টাইলসের মেঝেতে হাঁটু গেড়ে বসে, কান্নার মধ্যেই একের পর এক পারিবারিক অ্যালবাম উল্টে খুঁজে চলেছেন এনগান্থোইয়ের ছবি।
ভিডিওতে শোনা যাচ্ছে, এক নারী কাঁদতে কাঁদতে বলছেন— ‘আমার মেয়ে, যাকে আমি এই হাত দিয়ে বড় করেছি, সে কোথায়? আমি ওকে দেখতে চাই।’
আরেকজন বলেন— ‘আমার ফোনটা দাও, আমি ওর ছবি দেখতে চাই। আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি!’
এনডিটিভিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এনগান্থোইয়ের বোন গীতাঞ্জলি জানান, এনগান্থোই ২০২৩ সালের এপ্রিলে এয়ার ইন্ডিয়ায় এয়ারহোস্টেস হিসেবে যোগ দেন। তিনি বলেন, ‘আমরা তিন বোন।
এনগান্থোইর স্বপ্ন ছিল এয়ারহোস্টেস হওয়ার, সেই স্বপ্নই বাস্তবায়ন করেছিল। আজ লন্ডন যাওয়ার কথা ছিল ওর।
স্কুলে থাকতেই ওর মেসেজ পাই— বলেছিল নেট না থাকায় সে কিছু সময়ের জন্য যোগাযোগবিচ্ছিন্ন থাকবে। ১৫ জুন ওর ফেরার কথা ছিল।’
গীতাঞ্জলি আরও বলেন, ‘এরপর এক ফুফু ফোন দিয়ে জানায়, আহমেদাবাদ থেকে লন্ডনগামী একটি ফ্লাইট বিধ্বস্ত হয়েছে। তখনই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
আমরা জানি না ও ঠিক আছে কি না। ফোন এখনো বাজছে, এমনকি সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টও অনলাইন দেখাচ্ছে। এয়ারলাইনসের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কিছু জানানো হয়নি এখনো। আমরা অপেক্ষায় আছি।’
এয়ার ইন্ডিয়া এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘বিমানটি আহমেদাবাদ থেকে স্থানীয় সময় দুপুর ১টা ৩৮ মিনিটে উড্ডয়ন করেছিল।
এর ২ মিনিট পরেই বিমানটি উচ্চতা হারিয়ে শহরের মেঘানি নগর এলাকার একটি মেডিকেল কলেজের হোস্টেল ভবনে বিধ্বস্ত হয়। এতে ব্যাপক অগ্নিকাণ্ড এবং আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।’
বিমানে মোট ২৪২ জন আরোহী ছিলেন— যার মধ্যে ১৬৯ জন ভারতীয়, ৫৩ জন ব্রিটিশ, ৭ জন পর্তুগিজ এবং ১ জন কানাডিয়ান নাগরিক ছিলেন। এনগান্থোই ছিলেন কেবিন ক্রু দলের একজন সদস্য।
উদ্ধারকারী দল জানিয়েছে, বিমানের ব্ল্যাক বক্স উদ্ধার করা হয়েছে এবং দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ জানতে সেটি বিশ্লেষণ করা হবে।
এদিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এক্স (সাবেক টুইটার)-এ এক বার্তায় লিখেছেন, ‘আহমেদাবাদের এই দুর্ঘটনা ভাষার বাইরে হৃদয়বিদারক। আমি এই কঠিন সময়ে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে রয়েছি। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী ও কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমি নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি।’
গুজরাট সরকার জরুরি সহায়তার জন্য রাজ্য ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টারে একটি কন্ট্রোল রুম চালু করেছে।
নাগরিক এবং যাত্রীদের আত্মীয়স্বজন নিম্নোক্ত নম্বরগুলোতে যোগাযোগ করতে পারবেন: ল্যান্ডলাইন: 079-232-51900, মোবাইল: 9978405304।
এছাড়া, আহমেদাবাদ সিভিল হাসপাতাল থেকেও দুটি জরুরি নম্বর দেওয়া হয়েছে: 6357373831, 6357373841
বিমানটি ছিল বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার— যা সাধারণত আধুনিক ও নিরাপদ বিমান হিসেবে বিবেচিত হয় এবং এর অতীতে কোনো মারাত্মক দুর্ঘটনার রেকর্ড নেই। সূত্র- এনডিটিভি