সিএসপি ডেস্ক:
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যারা দেশ বিক্রির কথা বলে তারা একাত্তরে পাকিস্তানের দালালি করেছে। তারা নিজেরাই ভারতের কাছে বিক্রি করা। যখন মিলিটারি ডিক্টেটর এসেছে জিয়া, এরশাদ, খালেদা জিয়া, ওপর দিয়ে ভারতবিরোধী কথা বলেছে আর সেখানে গিয়ে তাদের পা ধরে বসে থেকেছে। কাজেই এই ধরনের কথা বলার কোনও অর্থ হয় না।
তিনি বলেন, আমরা স্বাধীন স্বার্বভৌম দেশ। যতোই ছোট হোক এটা আমাদের স্বার্বভৌমত্ব দেশ। আর সেই স্বার্বভৌমত্ব রক্ষা ও স্বকীয়তা বজায় রেখেই আমরা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রেখে কাজ করছি। শেখ হাসিনা এই দেশকে বিক্রি করে না। কারণ আমরা এই দেশকে স্বাধীন করেছি।
মঙ্গলবার (২৫ জুন) প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনে ভারত সফরের বিস্তারিত জানাতে সংবাদ সম্মেলনে এসে এ কথা বলেন তিনি।
ভারত সফরে বিভিন্ন চুক্তি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নেতিবাচক সমালোচনার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিক্রির ওজনটা কিসে মেপেছে? দেশ বিক্রি হয় কীভাবে? বাংলাদেশ স্বাধীন দেশ। যারা সমালোচনা করে তাদের জানা উচিত। সারা পৃথিবীতে একটি মাত্র মিত্র শক্তি যারা আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নিজেদের রক্ত দিয়ে এদেশ স্বাধীন করেছে। আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের ট্রেনিং দিয়েছে। পৃথিবীর যেকোনও দেশ মিত্র দেশ এসে তাদের সাহায্য করেছে, তারা কিন্তু সেই দেশ ছেড়ে ফিরে যায়নি। এখনো জাপানে আমেরিকার সৈন্য, জার্মানে রাশিয়ার সৈন্যসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সেই দৃষ্টান্ত পাওয়া যাবে। এখানে ভারত কিন্তু ব্যতিক্রম। ভারত মিত্র দেশ হিসেবে এখানে এসে যুদ্ধ করেছে। কিন্তু যখনই জাতির পিতা চেয়েছেন তারা দেশে ফিরে যাক, তখনকার প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়েছে এবং তাদের ফেরত নিয়ে গেছেন।
তারা যে যুদ্ধে সরঞ্জামাদি নিয়ে এসেছিলো, তারা কিন্তু ভারতের সেনাবাহিনীসহ সেগুলো প্রত্যাহার করে নিয়ে গেছে। এরপরও যারা কথা বলে দেশ বিক্রি হয়ে যাবে আমার প্রশ্ন, এরপর বিক্রিটা হয় কীভাবে?
তিনি বলেন, আমরা যে যোগাযোগ ব্যবস্থা খুলে দিলাম, এতে সব থেকে লাভবান তো আমাদের দেশের মানুষ। আমাদের দেশের মানুষ চিকিৎসার জন্য যায়, পড়াশোনার জন্য যায়, অন্যান্য কাজে যায়, আজমীর শরীফে যায়, এতে আমাদের ব্যবসা বাণিজ্যের ক্ষেত্রটা তো আরও উন্মুক্ত হবে। কাজেই বিক্রি আমরা করি না, যারা কথা বলে তারা বেচার জন্য অথবা ‘ইউজ মি’ এটা বলে বসে থাকে।
শেখ হাসিনা এই দেশকে বিক্রি করে না। কারণ আমরা এই দেশকে স্বাধীন করেছি। এটা তাদের মনে রাখা উচিত। আর যে কষ্টটা আমরা ভোগ করেছি সেটা আমরা জানি। যারা বিক্রির কথা বলে তারা একাত্তর সালে পাকিস্তানের দালালি করেছে।
একটা দেশের মধ্যে ট্রানজিট দিলে ক্ষতিটা কি-সেই প্রশ্ন রেখে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রেল যোগাযোগ যেগুলো বন্ধ ছিলো, আস্তে আস্তে সেগুলো খুলে দিচ্ছি। এতে আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য সহজ হচ্ছে। আমাদের ওই অঞ্চলের মানুষজন উপকৃত হচ্ছে। তাদের উৎপাদিত পণ্য বাজারজাতকরনের সুযোগ হচ্ছে। অর্থনীতিতে এটা বড় অবদান রাখছে। বাংলাদেশে আমরা কি সব দরজা বন্ধ করে বসে থাকবো? এটা হয় না। আজকে ইউরোপের দিকে তাকান, সেখানে কোনো বর্ডারই নাই। তাহলে কি একটা দেশ আরেকটা দেশের কাছে বিক্রি করে দিয়েছে? সাউথ এশিয়ায় কেন বাধা দিয়ে রাখবো। আমাদের দেশের মানুষের কথা চিন্তা করতে হবে। কারণ আমাদের দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করাটাই আমাদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।
ভারতের সাথে ওষুধের চুক্তিতে বাংলাদেশে ওষুধের দাম কমবে কি না বা আমাদের দেশের মানুষ কম খরচে চিকিৎসাসেবা পাবে কি না-এমন প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওষুধ শিল্পের অনেক কাঁচামাল ওখান থেকে আনতে হয়। আর কিছু কিছু ওষুধ আছে, যা এখনো আমরা উৎপাদন করি না। যদিও আমাদের ওষুধ শিল্প অনেক উন্নত এবং পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের এক-দেড়শ ওষুধ রপ্তানি করি। এরপরও কিছু কিছু বিশেষ ওষুধ থাকে, যা আমাদের দেশে সেভাবে শিল্প গড়ে ওঠেনি। সেক্ষেত্রে আমাদের দেশের মানুষ লাভবান হবে।
তিনি বলেন, আমাদের দেশের অনেক মানুষ সে দেশে চিকিৎসা নিতে যান। সেজন্য ভিসা সহজে করা যায়, আমরা করে দিয়েছি। আমরা উন্নতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। আমরা যতো বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রাখতে পারবো আর যতো বেশি ব্যবসা বাণিজ্য আদান প্রদান হবে, এতে বাংলাদেশই লাভবান হবে।
সিএসপি/বিআরসি