Logo
সোমবার, ১৯ মে ২০২৫, ০৭:০৯ অপরাহ্ন

মূল্যস্ফীতি-মুদ্রানীতি ও সরকারের ভাবমূর্তি

মূল্যস্ফীতি,মুদ্রানীতি, সরকার, ভাবমূর্তি

অর্থনীতি ডেস্ক : বাংলাদেশের ৫৪ বছরের রাষ্ট্রব্যবস্থায় গণতন্ত্র, একচ্ছত্রবাদ, কর্তৃত্ববাদ, সংসদীয়, রাষ্ট্রপতিশাসিত, একনায়কতন্ত্র, সামরিক, ছদ্ম সামরিক, কেয়ারটেকার, অন্তর্বর্তীকালীন ইত্যাদি রূপে কত ধরনের সরকার এসেছে ও গেছে, যাদের সবাই-ই নিজের সাফল্য তুলে ধরতে সাক্ষরতা-শিশুমৃত্যু-মাতৃমৃত্যু হার, নারীর ক্ষমতায়নসহ সুবিধার জিডিপি হারের মতো সামষ্টিক অর্থনীতির কম গুরুত্বপূর্ণ মানদণ্ডের নিরিখে নিজেদের সার্থকতার ফিরিস্তি দিয়েছে।

অথচ এরা কেউ-ই প্রথাসিদ্ধ অর্থনীতি শাস্ত্রে সামষ্টিক অর্থনীতি বলতে যা বোঝায়, অর্থাত্ সঞ্চয়-বিনিয়োগ, মূল্যস্ফীতি, রাজস্ব খাত, মুদ্রা ও আর্থিক খাত, বৈদেশিক খাতের রপ্তানি ও আমদানি, বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও রেমিট্যান্স, বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্য, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ও বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হারের মতো শীর্ষ সূচকের কোনোটিতেই লক্ষ্যণীয় কোনো সাফল্য দেখাতে পারেনি, তেমন একটা কথাবার্তা বলেনি।

তার পরও সাধারণ মানুষ রাষ্ট্রীয় অর্থনীতির অন্দরের এসব বিষয় নিয়ে খুব একটা মাথা ঘামায়নি। কারণ, তারা তাদের মৌলিকতম চাহিদা অর্থাত্ খাদ্যপণ্যেরর ন্যূনতম প্রাপ্তিটুকু পেয়ে খুশি থেকেছে।

প্রশ্ন হতে পারে, মূল্যস্ফীতির কি আসলেই এত ক্ষমতা আছে? অর্থনীতির ইতিহাসবিদরা তথ্য-প্রমাণ দিয়ে বলছেন, আছে। কারণ, মূল্যস্ফীতি শুধু অর্থনৈতিকভাবেই ক্ষতিকর নয়; এটি রাজনীতির অন্যতম অস্থিতিশীল ও ধ্বংসাত্মক শক্তি।

নিয়ন্ত্রণের বাইরে গেলে এটি নির্বাচনে প্রভাব ও সরকারক্ষমতাকে উলটে দিতে পারে, সমাজের মূল প্রতিষ্ঠানের ভিত্তি দুর্বল করে দিতে পারে এবং রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক শাসনব্যবস্থায়ও ব্যাপক পরিবর্তন আনতে পারে।

এই তত্ত্বের সবচেয়ে বড় উদাহরণ হচ্ছে, ১৯৭০-এর দশকের বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতি। তখন মূল্যস্ফীতির হার এত উঁচু ছিল যে ওই সংকটকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে প্রচলিত নিউ ডিল অর্থনৈতিক নীতি বড় ধরনের প্রশ্নের মুখে পড়েছিল, যা ১৯৮০-এর দশকে বিশ্ব জুড়ে ছোট সরকার ও বাজারমুখী রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির উত্থান ঘটিয়েছিল। এর কুফল বিশ্ব অর্থনীতি এখনো অনুভব করছে।

মূল্যস্ফীতি-মুদ্রাস্ফীতি তখনই ঘটে, যখন মানুষ প্রতারণা, জবরদস্তি ও চুক্তিভঙ্গের মাধ্যমে অর্থের জোগান বৃদ্ধি করে। এর ফলে সর্বদা তিনটি স্বতন্ত্র পরিণতি দেখা যায়। প্রথমত, যারা এটি ঘটায়, তারা অন্য সব অর্থ ব্যবহারকারীর ক্ষতির বিনিময়ে লাভবান হয়।

দ্বিতীয়ত, এটি ঋণের পরিমাণকে সেই সীমার বাইরে নিয়ে যেতে দেয়, যেখানে মুক্তবাজারে ঋণের স্বাভাবিক মাত্রা থাকার কথা।

তৃতীয়ত, এটি বাজারে অর্থের ক্রয়ক্ষমতা (পারচেজিং পাওয়ার পেরিটি-পিপিপি) সেই স্তরের নিচে নামিয়ে আনে, যেখানে এটি মুক্তবাজারে থাকতে পারত। এই তিনটি পরিণতি যথেষ্ট ক্ষতিকর হলেও, পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হয়ে ওঠে, যখন রাষ্ট্র মূল্য-মুদ্রাস্ফীতিকে উত্সাহিত ও প্রচার করে (ভাসমান বা ফিয়াট মুদ্রাস্ফীতি)।

সরকারের এই হস্তক্ষেপ মুদ্রাস্ফীতিকে দীর্ঘস্থায়ী করে তোলে এবং এর ফলে সমাজে মুদ্রাস্ফীতিনির্ভর প্রতিষ্ঠান ও অভ্যাস গড়ে ওঠে।

আমরা সবাই কমবেশি জানি যে, মূল্যস্ফীতি বা ইনফ্লেশন হলো ক্রয়ক্ষমতা ধীরে ধীরে হ্রাস পাওয়া, যা সময়ের সঙ্গে পণ্য ও পরিষেবা মূল্যের সামগ্রিক বৃদ্ধির মাধ্যমে প্রতিফলিত হয়। মূল্যস্ফীতির হার নির্ধারণ করা হয় নির্বাচিত কিছু পণ্য ও পরিষেবার গড় মূল্যবৃদ্ধির হার হিসাব করে, সাধারণত এক বছরের মধ্যে। উচ্চ মূল্যস্ফীতি নির্দেশ করে যে মূল্য দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে, আর নিম্ন মূল্যস্ফীতি বোঝায় যে, দাম ধীরগতিতে বাড়ছে।

মূল্যস্ফীতির বিপরীত হলো মুদ্রাস্ফীতি বা অবমূল্যায়ন বা ডিফ্লেশন। মূল্যস্ফীতি পরিমাপ করে পণ্য ও পরিষেবার দাম কত দ্রুত বাড়ছে, যা মূল্যস্ফীতি তিন ধরনের হতে পারে: চাহিদানির্ভর (ডিমান্ড-পুল), ব্যয়চালিত মূল্যস্ফীতি (কস্ট-পুশ) এবং অন্তর্নিহিত মূল্যস্ফীতি (বিল্ড-ইন)।

সর্বাধিক ব্যবহূত মূল্যস্ফীতির সূচক হলো ভোক্তা মূল্যসূচক (কনজিউমার প্রাইস ইনডেক্স-সিপিআই) ও পাইকারি মূল্যসূচক (হোলসেল প্রাইস ইনডেক্স-ডব্লিউপিআই)। মূলত ব্যক্তি দৃষ্টিভঙ্গির ওপর মূল্যস্ফীতি গ্রহণ-বর্জন নির্ভর করে।

ওপরে তুলে ধরা ঐতিহাসিক বাস্তবতা, অর্থনীতি শাস্ত্র ও দীর্ঘসময়ের বাংলাদেশের আর্থসামাজিক-রাজনৈতিক প্রবণতার আলোকে মূল্যস্ফীতি, মুদ্রানীতি ও বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের ভাবমূর্তি বিশ্লেষণের আগে গণমাধ্যম, সরকার, ব্যবসায়ীমহলের বক্তব্য সংক্ষেপে বলা দরকার।

কারণ, দেশের উচ্চ মূল্যস্ফীতির এই খেলায় এরাই মূল প্রভাবক। তবে বলে রাখা ভালো, সাধারণ মানুষের ভূমিকা এখানে কেবলই হাহুতাশ, বিরক্তি আর চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ পর্যন্ত।

গণমাধ্যম সরকারের পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস), অর্থ-বাণিজ্য উপদেষ্টা (মন্ত্রী) ও বাংলাদেশ ব্যাংকের (বিবি) গভর্নরের বক্তব্য ও গৃহীত পদক্ষেপের পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের অভিমত তুলে ধরছে এবং ফলোআপ করছে, যার সারর্মম হচ্ছে, ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে বাংলাদেশের সার্বিক মূল্যস্ফীতি কমে ৯.৯৪ শতাংশ হয়েছে, যা ডিসেম্বরে ছিল ১০.৮৯ শতাংশ।

খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি উল্লেখযোগ্যভাবে কমে ১০.৭২ শতাংশ হয়েছে (ডিসেম্বরে ছিল ১২.৯২ শতাংশ), তবে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি সামান্য বেড়ে ৯.৩২ শতাংশ হয়েছে (ডিসেম্বরে ছিল ৯.২৬ শতাংশ)।

গ্রামে সার্বিক মূল্যস্ফীতি কমে ১০.১৮ শতাংশে নেমেছে, শহরে তা ৯.৮৯ শতাংশ হয়েছে। খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি উভয় ক্ষেত্রেই হ্রাস পেয়েছে, তবে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি সামান্য বেড়েছে। অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলছেন, ‘মূল্যস্ফীতি কমানোর বিষয়টা অনেক জটিল।

আপনারা ধৈর্য ধরুন।…উত্পাদন বাড়াতে হবে, সরবরাহ নির্বিঘ্ন করতে হবে। এই দুইটি জায়গা ঠিক রাখতে পারলে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে’ ইত্যাদি ইত্যাদি। অন্যদিকে গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর আশার বাণী শুনিয়ে বলছেন, ‘আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের মধ্যে পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট ভিত্তিতে সাধারণ মূল্যস্ফীতির হার ৫ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনার লক্ষ্য রয়েছে।

আগামী জুনের মধ্যে মূল্যস্ফীতি ৭-৮ শতাংশে আনব।’ ওদিকে ব্যবসায়ী সমাজ বলছে, উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কঠোর মুদ্রানীতি বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবাহের পাশাপাশি সামগ্রিক অর্থনৈতিক সম্প্রসারণ বাধাগ্রস্ত করবে।

উচ্চ সুদের হারে ঋণের গতি কমবে, যা পণ্যের উত্পাদন খরচ ও পণ্যমূল্য বাড়াবে এবং দিন শেষে মূল্যস্ফীতি আরো বৃদ্ধি পাবে।

বাংলাদেশে প্রতি ছয় মাস অন্তর সাধারণত জানুয়ারি-জুন ও জুলাই-ডিসেম্বর সময়সীমা ধরে বাংলাদেশ ব্যাংক মুদ্রানীতি দেয়, যার মূল লক্ষ্য হলো মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখা ও মোট দেশজ উত্পাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করা।

তবে ক্রমাগত সংকোচনমুখী মুদ্রানীতি দিয়েও মূল্যস্ফীতির রাশ টানা বাংলাদেশে কেন কষ্টসাধ্য হচ্ছে, সেটি বুঝতে হলে কিছুটা পেছনে ফিরতে হবে।

১৯২০ সালে জানুয়ারি মাসে কোভিড-১৯ মহামারি যখন থেকে চীন, যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি, যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপ, মধ্যেপ্রাচ্যে ছড়িয়ে পড়ল, তখন থেকেই বাংলাদেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য সংকুচিত হতে শুরু করে। সেই সঙ্গে বৈদেশিক লেনদেন-সংশ্লিষ্ট সবকিছুই আঘাতপ্রাপ্ত হয়।

এরই মধ্যে শুরু হয় বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের অভূতপূর্ব মূল্যপতন (জ্বালানি তেল কিনলে বিক্রেতা উলটো আরো ক্রেতাকে ভর্তুকি দেবে) অর্থাত্ ডিফ্লেশন (সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দ্রুত ও লাগাতার মূল্যপতন)। আট মাস ধরে অর্থনীতির সবকিছু লন্ডভন্ড করে কোভিড চলে গেলেও অভিঘাত শুরু হয়।

এ সময় দেখা দেয় বৈশ্বিক ভূরাজনৈতিক অঙ্গনে পালাবদল, রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণসৃষ্ট ইউরোপীয় অস্থিরতা এবং ইসরাইল-হামাস যুদ্ধসৃষ্ট মধ্যপ্রাচ্য সংকট।

মূলত এই সময় থেকে বিশ্বের নানা দেশে মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি শুরু হয়। বাংলাদেশেও হুহু করে বাড়তে থাকে।

যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ, এশিয়ার ছোট-বড় অর্থনীতির কমবেশি সব দেশই মুদ্রানীতি কঠোর করে, বাজার ব্যবস্থায় তদারকি বাড়িয়ে মোটামুটি এক বছরের মধ্যে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে।

কিন্তু বাংলাদেশে একের পর এক অর্থনীতি সংকোচনমুখী মুদ্রানীতি দিয়েও কিছু করতে পারেনি। এর কারণ বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতি বহির্বিশ্বের চেয়ে অভ্যন্তরীণ কারণেই বেশি ঘটছে, যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বাজার ও সরবরাহব্যবস্থায় গুরুতর সমস্যা।

যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারতসহ উন্নত ও উদীয়মান অর্থনীতিতে ভোগব্যয়ের অবদান জিডিপির বড় অংশ জুড়ে থাকে। ফলে অর্থনীতিতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক সাধারণত মুদ্রানীতির মাধ্যমে সুদের হার বৃদ্ধি ও অর্থ সরবরাহে সংকোচন নীতি গ্রহণ করে।

উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, কোভিড-১৯ পরবর্তী সময়ে সরকারি প্রণোদনা, সরবরাহসংকট এবং অতিরিক্ত অর্থ সরবরাহে ২০২২-২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতি ৪০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ (৯.১ শতাংশ) হয়। ফেডারেল রিজার্ভ সুদের হার বাড়িয়ে ৫ শতাংশে উন্নীতের পাশাপাশি বাজারে টাকার প্রবাহ কমাতে কঠোর মুদ্রানীতি দেয়।

ফলে গত জানুয়ারি মাসে দেশটিতে মূল্যস্ফীতি ৩ শতাংশে নেমে এসেছে। প্রতিবেশী ভারতও ভারসাম্যপূর্ণ মুদ্রানীতি দিয়ে এক বছরের মধ্যে ৭ শতাংশের মূল্যস্ফীতি ৫ শতাংশে নামিয়ে এনেছে।

কিন্তু বাংলাদেশে কয়েক মাস ধরেই ব্যাংকগুলো বাজারের পরিস্থিতি অনুযায়ী নিজেরাই সুদ নির্ধারণের ক্ষমতা পেয়েছে। তার পরও মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশে উপরে! আসলে সরবরাহ ঘাটতি এবং আমদানি ব্যয় বেশি হওয়ায় সুদের হার বাড়লেও সরাসরি প্রভাব আসতে সময় লাগছে।

এমন এক প্রেক্ষাপটে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে নিজের ভাবমূর্তি টিকিয়ে রাখতে হলে, সাধারণ মানুষের চরম বিরাগভাজন হতে না চাইলে নানামুখী চাপ সত্ত্বেও আরো কঠোর মুদ্রানীতি গ্রহণ করে সুদের হার বৃদ্ধি করতে হবে, যাতে বাজারে অতিরিক্ত টাকা সরবরাহ কমে। সঙ্গে আরো কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে।

কারণ হিসেবে মনে রাখতে হবে, ডিসেম্বরে নির্বাচন হলেও দেশে নিশ্চিতভাবেই টাকার প্রবাহ বাড়বে। এজন্য সবার আগে খাদ্য ও জ্বালানি সরবরাহ স্থিতিশীল রাখতে আমদানি শুল্ক হ্রাস ও মজুতদারির বিরুদ্ধে কঠোরতম ব্যবস্থা নিতে হবে।

ড. অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়/সূত্র-ইত্তেফাক


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


ফেসবুক পেইজ