চট্টগ্রাম নগরীর ১৬টি থানায় মাদকের গডফাদার সহ তিনশত উনষাট মাদক কারবারির তালিকা তৈরি করেছে চট্টগ্রাম মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি)। অধিদপ্তর থেকে এই তালিকা ইতোমধ্যে পাঠানো হয়েছে সকল আইন শৃংখলা বাহিনী সহ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ঢাকা প্রধান কার্যালয়ে। যদিও ডিএনসির পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অন্যান্য ইউনিটও পৃথকভাবে তালিকা তৈরি করে থাকে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, এ তালিকার সঙ্গে অন্যান্য ইউনিটের তালিকার সমন্বয় করে মাদকবিরোধী অভিযান চলমান থাকবে।
পুলিশ, র্যাব, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অভিযানে প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও উদ্ধার হচ্ছে ইয়াবা, ফেনসিডিল, হেরোইনসহ নানা মাদকদ্রব্য। অভিযানে ধরা পড়ছে ছোট খাট কিছু মাদক কারবারিরা কিন্তু ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে মাদক ব্যবসার মুল গডফাদাররা। ডিএনসি সূত্র জানায়, চলমান মাদকবিরোধী অভিযানে গতি বাড়াতে নানামুখী তৎপরতা চালানো হচ্ছে। কৌশল অবলম্বন ও বারবার নিজেদের অবস্থান পরিবর্তন করায় মাদক কারবারিদের গ্রেপ্তারে বেগ পেতে হচ্ছে। নগরীর ১৬ টি থানার পাড়া-মহল্লায় মাদক ব্যবসা সচল রেখেছে তারা। এদের মধ্যে বেশিরভাগই পাইকার।
আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার কম নজরদারি থাকায় নৌ ও রেলপথকে চট্টগ্রাম মাদক পরিবহনের প্রধান রুটে পরিণত হয়েছে। নতুন নতুন কৌশলে চট্টগ্রামে মাদক ঢুকছে। ফলে কোনোভাবেই দমানো যাচ্ছে না মাদকের বিস্তার। চট্টগ্রাম মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, মিয়ানমার থেকে আসা ইয়াবা কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে চট্টগ্রাম হয়ে সারা দেশে সরবরাহ হচ্ছে।
চট্টগ্রাম মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, নগরীর ১৬টি থানায় মাদক গডফাদারদের একটি সিন্ডিকেট রয়েছে, আর এই সিন্ডিকেটের মাদক বিক্রি জন্য রয়েছে ৩৫৯ জন মাদক কারবারি। আর এই পুরো সিন্ডিকেটের সাথে মাদক ব্যবসা সমন্বয় করছে ১৬টি থানার কথিত ক্যাশিয়াররা।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, নগরীর সবচেয়ে বড় মাদকের আখড়া হিসাবে এক নম্বরে আছে টেক্সটাইলের চন্দ্রনগর কলাবাগান। চট্টগ্রামের বায়েজীদ বোস্তামী থানাধীন টেক্সটাইল চন্দ্রনগর কলাবাগান যেন মাদকের সাম্রাজ্য। নাসিমা, শরিফ, জনি, নয়ন, খলিল, দুলাল, রাশেদ ও নবী বায়েজীদ বোস্তামী থানাধীন টেক্সটাইল চন্দ্রনগর, কলাবাগান এলাকায় তারা গডফাদার হিসেবে পরিচিত। তাদের হাতেই মাদক সাম্রাজ্যের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ। এদের সবার বিরুদ্ধে একাধিক মাদক মামলা রয়েছে।
এরপরই রযেছে বরিশাল কলোনির নিয়ন্ত্রক মো. ইউসুফ। সিআরবি চৌদ্দ জামতলা বস্তির মাদক ব্যবসার প্রধান নিয়ন্ত্রক আলো আক্তার প্রকাশ খাল্লাম্মা। এই খাল্লাম্মা নিযন্ত্রণে রযেছে চট্টগ্রাম রেলওয়ের সি আর বি,টাইগারপাস,কদমতলী রেলগেইট,বিআরটিসি,পুরাতন ষ্টেশন,নতুন ষ্টেশন, নিউমাকেট, জুবিলীরোড়, কাজীরদৈউরি,ওয়াসার মোড়, লালখান বাজার, ১৪ নম্বর আমতলী বস্তি, বয়লার কলোনি, বিআরটিসি এলাকা, এনায়েতবাজার ও গোয়ালপাড়া। আলো প্রকাশ খাল্লামার শুধু মাদক ব্যবসায় নয় এই সব এলাকার ছিনতাইকারীদের প্রধান মুল হোতাও সে।
চট্টগ্রাম রেলওয়ে সি আর বি আশেপাশে এলাকায় আলো প্রকাশ খাল্লামার মাদক বিক্রি নিয়ন্ত্রন করে আলতাফ ও বাবু। এনায়েত বাজার,গোয়াল পাড়া ও তুলাতলীর মাদক বিক্রি নিয়ন্ত্রন করে তোহিদ ও জনি, রেলওয়ে ব্রয়লার এভিনিউ বস্তিতে অলি, খলিল ও শেফালী, রেলওয়ে জামতলা বস্তিতে মিলন, জনি, রুবেল, রাজু, শুকতারা, মুন্নীসহ আধাশতাধিক মহিলা ও পুরুষ, বি আর টিসিতে কেরেট মহরম, কদমতলী ও পুরাতন ষ্টেশন এবং নতুন ষ্টেশন আশেপাশে এলাকায় আলো প্রকাশ খাল্লামার মাদক বিক্রি নিয়ন্ত্রন করে মামুন তার বিশাল আধাশতাধিক মহিলা ও পুরুষ বাহিনী দিয়ে। আলো প্রকাশ খাল্লামার এই বিশাল বাহিনীদের নিযন্ত্রণ করে আলোর বড় বোন আয়শা ও পালিত পিতা সালেহ আহমেদ, রোকেয়া প্রকাশ মামি।
এর পরেই রযেছে হালিশহর বড়পোল এলাকার করিম ওরফে ডাইল করিম, সদরঘাট ধোপার মাঠ বস্তির মাইজ্যামিয়া, সিমেট্রি রোড এলাকার আরমান, বাকলিয়া কালামিয়া বাজারের আলী জহুর, বাকলিয়ার আমজাদ, সেলু, বাবু, রেয়াজুদ্দিন বাজারের জাহিদ, আকবরশাহ থানার সিডিএ ১ নম্বর রোড এলাকার মো. আলমগীর, মো. খোরশেদ ও বাবলু, সদরঘাট থানার আইস ফ্যাক্টরি রোডের মরিচ্যাপাড়া এলাকার মো. ফারুক রানা, মো. চাঁন মিয়া, খাতুনগঞ্জ ওসমানিয়া লেনের মো. দিদার, বাকলিয়া থানার রাজাখালী এলাকার রাবেয়া বশরী বকুলী, আজগর, মনির হোসেন কেহেরমান, খুলশী থানা এলাকার জুয়েল এবং শাহজাহান, পাহাড়তলী এলাকার নূরজাহান, ডবলমুরিং এলাকার পিচ্চি আলো এবং বন্দর থানা এলাকার ইকবাল।
চট্টগ্রাম মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চট্টগ্রামের ৫০টি স্পটে মাদকের কেনাবেচা হয় বলে চট্টগ্রাম নগরীর অন্তত ৫০টি স্পটে মাদক বেচাকেনা হয়।এর মধ্যে রয়েছে বাইজিদ বোস্তামী থানা দিন চন্দ্রনগর কলাবাগান, কোতোয়ালি থানার বরিশাল কলোনী, পুরাতন রেল স্টেশন, ১৪ নম্বর আমতলী বস্তি, বয়লার কলোনি, বিআরটিসি এলাকা, মনোহরখালী, ফিশারিঘাট, নজুমিয়া লেন, মিরিন্ডা লেন, লালদীঘি, ঘাটফরহাদবেগ, পোস্ট অফিস গলি ও এনায়েতবাজার গোয়ালপাড়া,খুলশী থানার বাটালি হিল, মতিঝর্ণা, টাইগারপাস বস্তি, ট্যাঙ্কির পাহাড়, শহীদনগর লেন ও বিহারি কলোনি। বায়েজিদ থানার আরফিন নগর বিশ্ব কবরস্থান সংলগ্ন, শেরশাহ কলোনী, ঝর্ণা কলোনি, রৌফাবাদ রেলওয়ে কলোনি, মুক্তিযোদ্ধা কলোনী, জামতলা, ডেবার পার, কলাবাগান, আরেফিন নগর, ভাঙা বাজার ও আমিন জুট মিল। চান্দগাঁও থানার মেসতা চৌধুরী ঘাটা, রাহাত্তারপুল এজাহার মিয়ার বাড়ি, কালুরঘাট পুলিশ ফাঁড়ির পেছনে এবং কাপ্তাই রাস্তার মাথা, বাকলিয়া থানার চর চাক্তাই, তক্তারপুল, ভাইল বেপারীর গলি, রাহাত্তারপুল, মাস্টারপুল, বালুরমাঠ, বৈদ্যারটেক, রাজাখালী, পুলিশ বিট, বউবাজার ও তুলাতলী পয়েন্ট। চকবাজার থানার ধুনিরপুল, চাঁন মিয়া মুন্সী লেন, কার্পাসগোলা ব্রিজ ও চক সুপার মার্কেট এলাকা। পাঁচলাইশ থানার খতিবের হাট, ষোলশহর রেলস্টেশন, হামজারবাগ রেলওয়ে গেট, আমীন কলোনি ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ এলাকা। সদরঘাট থানার মাদারবাড়ি রেলগেট এলাকা, রেল বিট পানির টাঙ্কি ও শাহজাহান হোটেল।