Logo
বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ০১:২৪ অপরাহ্ন
শিরোনাম:

ফেরি সেবা/দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে খুলল নতুন দ্বার

ফেরি,অপেক্ষা, অবসান, দ্বার

মহাখুশী সন্দ্বীপবাসী
চার লাখ মানুষের যাতায়াতে দুঃখ দুর্দশা লাঘব
সীতাকুণ্ড-সন্দ্বীপ রুটে চলছে ফেরি ‘কপোতাক্ষ’

দীর্ঘ অপেক্ষার পালা শেষ করে আজ বহু প্রতীক্ষিত স্বপ্ন পূরণ হয়েছে চট্টগ্রামের দ্বীপ উপজেলা সন্দ্বীপবাসীর।

তাছাড়া দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো সমুদ্রপথে (চট্টগ্রাম-সন্দ্বীপ রুটে) ফেরি চলাচল শুরু হয়েছে ২৪ মার্চ সোমবার। এদিন সকাল সাড়ে ৮টায় সীতাকুণ্ডের বাঁশবাড়িয়া ঘাটে এই ফেরি সেবার উদ্বোধন করেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ৬ জন উপদেষ্টা।

অন্তর্বর্তী সরকারের নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক ই আজম, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার উপস্থিত থেকে এই ফেরি চলাচলের উদ্বোধন করেন।

এদিকে, ফেরির পাশাপাশি সোমবার থেকে ঢাকা-সন্দ্বীপ রুটে বিআরটিসির বাস চলাচলও উদ্বোধন করেন উপদেষ্টারা।

এছাড়া চট্টগ্রামের এয়ারপোর্ট-সি বিচ-নিমতলা-নয়াবাজার-কুমিরা-বাঁশবাড়িয়া ফেরিঘাট-সন্দ্বীপ এনাম নাহার মোড় রুটেও এসি বাস সেবা চালু করেছে বিআরটিসি।

ফেরি এবং বিআরটিসি বাস সেবা উদ্বোধন উপলক্ষ্যে সন্দ্বীপ উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি বক্তব্য দিয়েছেন অন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।

নতুন দিগন্তের সূচনা দ্বীপবাসীর
সোমবার সকালে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার বাঁশবাড়িয়া ফেরিঘাট থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রথম ফেরি ‘কপোতাক্ষ’ ছেড়ে যায় সন্দ্বীপের গুপ্তছড়ার উদ্দেশে। এতে দ্বীপবাসীর জীবনযাত্রায় নতুন দিগন্তের সূচনা হলো।

ফেরি সেবার মাধ্যমে বিভিন্ন যানবাহন চলাচলের সুযোগ সৃষ্টি হওয়ায় প্রায় চার লাখ মানুষের জীবনযাত্রার মান ও অর্থনৈতিক সক্ষমতা বাড়ার পাশাপাশি উপজেলায় পর্যটকও বাড়বে বলে প্রত্যাশা সন্দ্বীপবাসীর।

যাতায়াত সময় ও ফেরির ধারণ ক্ষমতা :

বিআইডব্লিউটিএর চট্টগ্রাম অঞ্চলের উপ-পরিচালক মো. কামরুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) তত্ত্বাবধানে চালু হওয়া ফেরিতে চট্টগ্রাম থেকে সন্দ্বীপে যেতে সময় লাগছে এক ঘণ্টা ১০ মিনিট। তাছাড়া সন্দ্বীপ থেকে যাত্রীরা ফেরিতে সীতাকুণ্ডের বাঁশবাড়িয়া ঘাট হয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যাতায়াত করবেন।

জোয়ার-ভাটা হিসেব করে ছোট-বড় ৩৫টির মতো যানবাহন এবং ৬শ যাত্রী ধারণ ক্ষমতার এই ফেরি প্রতিদিন চারবার ঘাট বদল করবে বলে জানান বিআইডব্লিউটিএর এ কর্মকর্তা।

কয়েকদিন আগেও কেমন ছিলো সন্দ্বীপ :
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চট্টগ্রামের মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা সন্দ্বীপ। দীর্ঘদিন ধরে এ উপজেলার প্রায় চার লাখ মানুষকে নিত্যপ্রয়োজনীয় কাজের জন্য দুর্ভোগ পোহাতে হতো। বৈরী আবহাওয়ায় দ্বীপটি প্রায়ই মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেত, এসময়ে অসুস্থ রোগীদের উন্নত চিকিৎসার জন্য শহরে নেওয়াটা দ্বীপবাসীর জন্য দুঃসাধ্য হয়ে উঠত।

দীর্ঘদিনের দাবিতে ফেরি সেবা:
বঙ্গোপসাগরের এ দ্বীপ উপজেলায় যাতায়াতের অন্যতম রুট সীতাকুণ্ড-সন্দ্বীপের ১৮ কিলোমিটার সমুদ্রপথে ফেরি চলাচলের দাবি ছিলো দীর্ঘদিনের। অতীতে কয়েকবার চেষ্টা করেও বহুল আকাঙ্ক্ষিত ফেরি সেবা চালু করা সম্ভব হয়নি।

দাবি নিয়ে সংশ্লিষ্ট মহলে বার বার ধর্না দেওয়ায় সবশেষ ২০২২ সালে ফেরি সার্ভিসের উদ্যোগ নেয় সরকার। তবে আশা জাগিয়েও অজ্ঞাত কারণে সময়ক্ষেপনে হাল ছেড়ে দেয় দ্বীপবাসী।

স্বপ্নদ্রষ্টা উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান:
গেল জুলাই গণঅভূত্থ‍্যানের পর ৫ আগষ্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পরিবর্তণ হয়। এরপর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়। এতে সন্দ্বীপের সন্তান মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান উপদেষ্টা মনোনীত হওয়ার পর থেকে পুনরায় ফেরি সেবার স্বপ্ন বুনতে থাকে উপজেলাবাসী। কয়েকমাসের প্রচেষ্টায় তিনি দ্বীপবাসীর যাতায়াতে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করলেন। অবশেষে ফেরি চলাচলের উদ্বোধনের মাধ্যমে বহুল প্রতিক্ষীত স্বপ্ন আজ পূরণ হয়েছে দ্বীপবাসীর।

দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান,মহাখুশী দ্বীপবাসী :
ফেরি সার্ভিস চালুর মাধ্যমে সাগরবক্ষের এই দ্বীপের সঙ্গে মূল ভূখণ্ডের সরাসরি যোগাযোগের স্বপ্ন পূরণ হল। এখন থেকে সরাসরি দ্বীপে পৌঁছাবে বাস, ট্রাক ও প্রাইভেট কারসহ সব ধরনের যানবাহন।

দ্বীপের বাসিন্দা জবা বণিক জানান, চট্টগ্রাম-সন্দ্বীপ নৌরুটে ফেরি সার্ভিস চালু হওয়ায় দ্বীপ উপজেলায় সম্ভাবনার নতুন দ্বার খুলে গেল। এ উপজেলার মানুষের যাতায়াতের দুঃখ দুর্দশা লাগব হবে।

মো. রবিউল আলম নামে অপর এক বাসিন্দা ফেরি সার্ভিস চালু হওয়ায় ভীষণ খুশি। তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, সন্দ্বীপবাসীর দীর্ঘদিনের স্বপ্ন আজ পূরণ হলো। এবার ভিন্নভাবে ঈদ উদযাপন করবে দ্বীপবাসী। স্বপ্নের ফেরি সার্ভিস চালু হওয়ায় এবার ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে সন্দ্বীপে পরিবার-পরিজনের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে পারবে মানুষ।

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সালেহ নোমান বলেন, ফেরি সার্ভিস উদ্বোধনে শুধু দ্বীপের সঙ্গে মূল ভূখণ্ডের সংযোগই দৃঢ় করবে না, বরং অর্থনৈতিক উন্নয়ন, শিক্ষার প্রসার ও চিকিৎসা সেবার মানোন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

ফেরিতে যাতায়াত ফি : বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) তত্ত্বাবধানে চালু হওয়া ফেরিতে চলাচলের জন্য সাধারণ যাত্রীর ১০০ টাকা, মোটরসাইকেল ২০০ টাকা, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ৫০০ টাকা, ব্যক্তিগত গাড়ি ৯০০ টাকা, বাস ৩ হাজার ৩০০ টাকা, ট্রাক ৩ হাজার ৩৫০ টাকা এবং ১০ চাকার গাড়ি ৭ হাজার ১০০ টাকা ফি নির্ধারণ করা হয়েছে।

এর আগে গত ১৯ মার্চ সীতাকুণ্ডের বাঁশবাড়িয়া থেকে সন্দ্বীপের গুপ্তছড়া সাগরপথে পরীক্ষামূলক ফেরি চলাচল শুরু হয়। ফেরি ‘কপোতাক্ষ’ নামে ফেরিটি দিয়ে এই সেবা চালু হয়। সোমবার ২৪ মার্চ একই ফেরি দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে ফেরি চলাচল শুরু হয়।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


ফেসবুক পেইজ