নিজস্ব প্রতিবেদক: চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের বিদ্যুৎ উপ বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী নিজ দপ্তরেই স্ত্রীর নামে ঠিকাদারী ব্যবসা পরিচালনা অভিযোগ উঠেছে।
এনামুল হক চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের বিদ্যুৎ উপ বিভাগের বাতি পরিদর্শক সহকারী প্রকৌশলী বিদ্যুৎ (অতিরিক্ত দায়িত্ব) তার স্ত্রী ঈদগাঁ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন সেলিনা আকতার, স্ত্রী সেলিনার নামে ‘গোল্ডেন এন্টারপ্রাইজ’ নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান খুলে প্রকৌশলী এনামুল হক চসিকের সাথে ব্যবসা করে হাতিয়ে নিচ্ছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের লক্ষ লক্ষ টাকা।
বিষয়টি আড়াল করতে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন থেকে নেয়া ট্রেড লাইসেন্সে ঈদগাঁ সরকারী প্রাথমিক বালিকা বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা সেলিনা আক্তার কৌশলে স্বামী এনামুলের
নাম না লিখে লিখেছেন বাবা-মার নাম। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আলমগীর হোসেন নামের একজনকে ব্যবসায়ীক অংশীদার বানিয়ে সংগ্রহ করেছেন চসিকের ঠিকাদারী লাইসেন্স যাহার লাইসেন্স নং- ১৬৬৭০।
যদিও প্রকৌশলী এনামই সব কাজ দেখাশোনা করেন। তার কাজের অন্যতম পার্টনার আলমগীর নন্দনকাননের একটি বিদ্যুৎ সরঞ্জামের দোকানদার। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ঠিকাদারদের সঙ্গে এনামুলের গাঁটছড়া বাধার কারণে সাধারণ ঠিকাদারদের সবকিছু মুখ বুজে সহ্য করতে হয়। তাদের অভিযোগ, অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা সহকারী প্রকৌশলী এনামুল হকের প্রতিষ্ঠানের কাজও সবচেয়ে নিম্নমানের। নিজে স্ত্রীর নামে ঠিকাদারি ব্যবসা করার কারণে তিনি সাধারণ ঠিকাদারদের প্রতিপক্ষ করছেন। কোনো সময় যদি তিনি কাজ না পান, তখনই তার রোষানলে পড়েন কাজ পাওয়া ঠিকাদার।
চসিক সচিবালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৯৮ সালে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সড়কবাতি পরিদর্শক হিসেবে নিয়োগ পান ডিপ্লোমাধারী এনামুল হক। উপ সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে চলতি দায়িত্বে পদোন্নতি পান ২০০৯ সালের এপ্রিল মাসে, অনুসন্ধানে জানা যায় তার পদোন্নতি পত্রে কোন সুযোগ সুবিধার বিষয়ে লেখা না থাকলেও সব সুযোগ সুবিধাই নিয়েছেন গত বার বছর। চলতি বছরের ৭ ই এপ্রিল অতিরিক্ত দায়িত্বে সহকারী প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ) হিসেবে এনামুল হক নতুন করে পদোন্নতি পান।
পদোন্নতি পাওয়ার পরের মাসেই বরাদ্ধ পান সি এন জি টেক্সী, খোজঁ নিয়ে জানা যায় অন্যান্য প্রকৌশলীদের বরাদ্ধকৃত গাড়ীর তৈল/গ্যাস বাবদ মাসিক বেতন হইতে টাকা কর্তন করা হলেও এনামুল হকের বরাদ্ধকৃত গাড়ীর তৈল/গ্যাস বাবদ মাসিক বেতন হইতে কর্তন হচ্ছে না।
আরো জানা যায় তার ব্যক্তিগত মোটর সাইকেলের নাম্বার প্লেইট বিহীন (চসিক ) নাম এবং চসিক মনোগ্রাম ব্যবহার করে যাচ্ছে বছরের পর বছর, যার ফলে বাৎসরিক রাজস্ব হারাচ্ছে “বিআরটিএ” ।
স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) আইন ২০০৯ এর ধারা ৯২ এর তফসিল ৬ এর ৫৯ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা আছে সিটি কর্পোরেশনের কোন কাউন্সিলর বা কোন কর্মকর্তা কর্মচারী কর্তৃক স্বজ্ঞানে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে স্বয়ং বা কোন অংশীদার মারফত কর্পোরেশনের কোন ঠিকাদারিতে স্বত্ব বা অংশ অর্জন করা বেআইনি উল্লেখ থাকলেও এই আইন অমান্য কারী অভিযুক্ত প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে অদৃশ্য কারণে কোন প্রকার ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন না বলে অভিযোগ উঠেছে সিটি কর্পোরেশনের উদ্যতন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে।
এ বিষয়ে চসিক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জনাব শহীদুল আলমের মোবাইলে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেন নি।
অনুসন্ধানে জানা যায়, স্ত্রী সেলিনা আকতার হালিশহরের ঈদগাঁ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা হিসেবে কর্মরত অবস্থায় ২০১৬-১৭ সালে স্বামী এনামের কর্মস্থল চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে ঠিকাদারীর কাজ করেছেন। গোল্ডেন এন্টারপ্রাইজ নামের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ঠিকানা লেখা আছে এম রহমান মার্কেট ৩৬/৪৬ নন্দনকানন।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন ট্রেড লাইসেন্স শাখার বালাম বইতে গোল্ডেন এন্টারপ্রাইজের মালিক হিসেবে আলমগীর হোসেন ও সেলিমা আকতারের নাম উল্লেখ রয়েছে।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনে নথি অনুসারে, গোল্ডেন এন্টারপ্রাইজের নামে ২০১৬ সালের ২৯ শে নভেম্বর প্রকৌশল বিদ্যুৎ উপ বিভাগের জোন -৪ এর আওতাধীন কেন্দ্রীয় সড়কবাতি রক্ষণাবেক্ষণ করার জন্য সোডিয়াম বাতির আনুষাঙ্গিক মালামাল সরবরাহ ( স্মারক- চসিক / প্রবি/বিদ্যুৎ /ত:প্র:-১/১৬- ১৫৩) করেছেন ২ লক্ষ ৩১ হাজার পাঁচশত ২৫ টাকার।
২০১৭ সালে ৫ ই জানুয়ারি ২৬ উত্তর হালিশহর ওয়ার্ডের গলাচিপা পাড়ার বি ব্লকে সাবেক ইদ্রিস কমিশনার বাড়ির পশ্চিম পাশের সড়ক আলোকায়নের কাজের কার্যাদেশ পেয়েছিলেন সেলিমা আকতার। এক লক্ষ ষাট হাজার ২২৫ টাকার কাজটি করার সময় চসিকের বিদ্যুৎ উপ বিভাগের উপ সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত ছিলেন এনামুল। এই প্রকল্পের নথি অনুযায়ী ব্যয় প্রাক্কলনকারী সেলিনার স্বামী এনামুল হক এনামই আবার স্ত্রীর কাজের বিল উপস্থাপনকারী হিসেবে স্বাক্ষর করেছেন।
একই বছরে দামপাড়া স্টোরের জন্য স্টিলের র্যাক ক্রয়ের জন্য ৪ লাখ ৯৫ হাজার টাকার কার্যাদেশ ( স্মারক- চসিক / প্রবি/বিদ্যুৎ / পিওএম / ১৭/১০৬, ৩/০৪/২০১৭) দেয়া হয়েছে গোল্ডেন এন্টারপ্রাইজকে।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, চট্টগ্রাম নগরের জুবলী রোড়ের শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের গোল্ডেন এন্টারপ্রাইজের নামে ( হিসাব নং-৩০০-৩১১-১০০০০২৮১২) একটি হিসাব খোলা হয়েছে। ব্যাংকের নথি অনুযায়ী সেলিনা আকতার তার স্বামী হিসেবে প্রকৌশলী এনামুল হকের নাম লিখেছেন। এই যৌথ হিসাবেই চসিকের বিলের টাকা জমা দেয়া হয়েছে।
এসব অভিযোগের বিষয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের বিদ্যুৎ উপ বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী এনামুল হকের মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো ধরণের উত্তর না দিয়ে মোবাইল কেটে দেন।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা হিসেবে কর্মরত থাকা অবস্থায় চসিক প্রতিষ্টানে ঠিকাদারী করা যায় কিনা এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর হইতে সরকারী চাকুরীরত অবস্থায় ঠিকাদারী করার অনুমতি নিয়েছেন কিনা জানতে সেলিনা আকতারের মোবাইলে ফোন করা হলে তিনি প্রতিবেদকের প্রশ্নে কোনো জবাব না দিয়ে মোবাইল কেটে দেন।
চট্টগ্রাম জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো: শহিদুল ইসলাম প্রতিবেদককে বলেন সরকারী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।