Logo
বৃহস্পতিবার, ২০ মার্চ ২০২৫, ০৪:৩৬ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম:
প্রবীন শিক্ষক বাবু বাদল চন্দ্র দাশ আর নেই পোশাক বিক্রিতে প্রতারণা: মেগা মার্টকে লাখ টাকা অর্থদণ্ড ইসলামী আদর্শ বাস্তবায়নে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা পালন করতে হবেঃ আনোয়ারুল আলম চৌধুরী লোহাগাড়ায় মার্কেট-শপিং সেন্টারে প্রশাসনের মনিটরিং ৮ প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা জেলা প্রশাসনের পৃথক অভিযানে লক্ষাধিক টাকা জরিমানা আদায় চট্টগ্রাম বন্দরে ৪ হাজার শূন্যপদে স্বচ্ছ নিয়োগ চায় জামায়াত পবিত্র কুরআনে মানবজীবনের সকল বিষয়ে দিক নির্দেশনা রয়েছে চান্দগাঁও থানার চুরির মামলায় দুই আসামি গ্রেপ্তার কর্ণফুলী নদীতে নিখোঁজ শাকিলের নিথর দেহ উদ্ধার হাটহাজারীতে বলৎকারের অভিযোগে মাদ্রাসা শিক্ষার্থী আটক

চবির দুই হলে প্রভোস্ট আছেন, শিক্ষার্থী নেই

ইয়াছিন আরাফাত: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ছাত্রদের আবাসন সংকট নিরসনে ২০১৮ সালের ১৩ মে শুরু হয় অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান হলের দ্বিতীয় পর্যায়ের নির্মাণকাজ। সাড়ে ৬ মাসের কাজ ৪৩ মাসেও শেষ করতে না পারায় প্রায় ১১ মাস আগে নির্মাণকাজের কার্যাদেশ বাতিল করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তবে পুরোপুরি কাজ শেষ না হওয়ায় কোন বিভাগের ছাত্রদের এই হলে সংযুক্তিও দেওয়া হয়নি।
অথচ নির্মাণাধীন হলটিতে ২০২০ সালের জুলাই মাস থেকে প্রভোস্ট নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে হল প্রভোস্টের দ্বায়িত্ব পালন করছেন ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. সুমন বড়ুয়া। এর আগে আরও দুইজন দুই মেয়াদে প্রভোস্টের দ্বায়িত্ব পালন করেছেন।
একই চিত্র বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলেরও। ছাত্রীদের জন্য নির্ধারিত এই হলের উদ্বোধন হয়েছে গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে। তবে উদ্বোধন হওয়ার এক বছরেরও বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও এখনো পর্যন্ত আসন বরাদ্দ দেয়া হয়নি। এমনকি নতুন শিক্ষাবর্ষের কোন শিক্ষার্থীকে এই হলে সংযুক্তিও দেয়া হয়নি। অথচ এই হল এক বছরের অধিক সময় ধরে প্রভোস্ট নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। কয়েক মাস আগে নিয়োগ দেওয়া হয় আবাসিক শিক্ষকও। এদিকে সব ধরনের কাজ শেষ হওয়ার পরও হলে আসন বরাদ্দ না দেয়ায় অন্যান্য হলে ধারণক্ষমতার কয়েকগুণ বেশি ছাত্রী অবস্থান করছে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালের ১৩ মে ৪ কোটি ৪১ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘অতীশ দীপংকর হল’ প্রকল্পের কার্যাদেশ পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স মঞ্জুরুল আলম চৌধুরী। কার্যাদেশে সাড়ে ৬ মাস (১৯৭ দিন) মাসে কাজ শেষ করতে বলা হয়৷ কিন্তু পাঁচবার মেয়াদ বাড়িয়ে ৪৩ মাসে এই প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে মাত্র ৪৯ শতাংশ। এই কাজের জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে পরিশোধ করা হয়েছে ২ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। পরবর্তীতে ২০২১ সালের ১৫ ডিসেম্বর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কার্যাদেশ বাতিল করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
এবিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) সৈয়দ জাহাঙ্গীর ফজল বলেন, নতুন করে গত পিএন্ডডিতে (প্ল্যানিং এন্ড ডেভেলপমেন্ট) টেন্ডার সিলেক্ট করা হয়েছে। দ্রুত কাজ শুরু হবে।
অন্যদিকে ১৬ কোটি ২৯ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব  হলের নির্মানকাজ শেষ হয় গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে। পরবর্তীতে একই মাসের ২৮ তারিখ শিক্ষামন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সে  হলের উদ্বোধন ঘোষণা করেন। এই হলে ৩১২ জন ছাত্রীর আবাসনের সুবিধা রয়েছে। এর আগে গত বছর জুন মাসে বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক প্রকাশ দাশগুপ্তকে প্রভোস্ট নিয়োগ দেয়া হয়। তবে প্রভোস্ট নিয়োগ দেয়ার এক বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো হলে কোন লোকবল নিয়োগ দেয়া হয়নি।
এদিকে হলে শিক্ষার্থী না থাকলেও রীতিমতো প্রভোস্টের সকল সুযোগ-সুবিধা, এমনকি ভাতাও গ্রহণ করছেন প্রভোস্টেরা ।বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব শাখা সূত্রে জানা যায়, কোনো অধ্যাপক যদি প্রভোস্ট হিসেবে দায়িত্ব পান সেক্ষেত্রে মূল বেতনের শতকরা সাড়ে ১২ ভাগ হারে ভাতা পেয়ে থাকেন।
যে হলে শিক্ষার্থী নেই সেখানে আবাসিক শিক্ষকের কাজ কী, লোকবল নিয়োগ না দিয়ে কেন আবাসিক শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে এবং লোকবল কবে নিয়োগ দেওয়া হবে এসব ব্যাপার বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের প্রভোস্ট ও সহযোগী অধ্যাপক প্রকাশ দাশগুপ্ত আজকালের খবরকে বলেন, আমি নিজেও আবাসিক শিক্ষকদের মতো নিযুক্ত হয়েছি। লোকবল নিয়োগ ইউজিসির মাধ্যমে হয়ে থাকে। যা সময় সাপেক্ষ। আমরা প্রচেষ্টা চালাচ্ছি দ্রুত লোকবল নিয়োগের জন্য।
তিনি আরও বলেন, লোকবল নিয়োগ না হওয়ার কারণে শিক্ষার্থীদের হলে উঠানো যাচ্ছে না। গত সিন্ডিকেট সভায় হলের আসন বরাদ্দের নীতিমালা অনুমোদন হয়েছে।
গত বছর ২০-২১ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রীদের আসন বরাদ্দ দেওয়ার কথা বললেও একবছর পর ২১-২২ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রীরা হলে উঠতে পারবেন কিনা তাও সঠিকভাবে জানাতে পারেননি এই প্রভোস্ট।
যাদের জন্য হল অথচ তাদের কোন খবর নেই, প্রভোস্ট-আবাসিক শিক্ষক মাসের পর মাস বিনাকাজে বেতন নিচ্ছেন। বিষয়টিকে শিক্ষার্থীদের সাথে এক প্রকার রসিকতা বলছেন জৈষ্ঠ অধ্যাপকেরা।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি ও আইন বিভাগের অধ্যাপক জাকির হোসেন বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে চরম আবাসন সংকট। দুটি হল নির্মাণের পরও আসন বরাদ্দ না দেওয়া এবং এর পিছনে লোকবল নিয়োগ না হওয়াকে দায়ী করা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। বিশ্ববিদ্যালয়ে কি নিয়োগ হচ্ছে না! বরং অতিরিক্ত নিয়োগ দিতেও আমরা দেখেছি। এটা আসলে কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতা ও সদিচ্ছার অভাব।’
তিনি আরও বলেন, লোকবল নিয়োগ দিতে যদি বেশি সময় লাগে তাহলে এই মূহুর্তে প্রশাসনের উচিত অন্যান্য জায়গায় থেকে লোকবল নিয়ে হলেও সাময়িক ভাবে শিক্ষার্থীদের আসন বরাদ্দ দিয়ে আবাসন সংকট কমানো।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


ফেসবুক পেইজ