-সৈয়দ জিয়াউল হক মাইজভাণ্ডারীর ৯৪তম খোশরোজ শরিফে সৈয়দ মোহাম্মদ হাসান মাইজভাণ্ডারী (ম.)
দূর দূরান্ত থেকে শুভ্রতার প্রতীক ফুল হাতে নিয়ে আসা ভক্ত জনতার অংশগ্রহণে বিশ্বঅলি শাহানশাহ্ হযরত শাহ্ সুফি সৈয়দ জিয়াউল হক মাইজভাণ্ডারী (ক.) এর ৯৪তম ১০ই পৌষ খোশরোজ শরিফ পালিত হয়েছে। ২৫ ডিসেম্বর রবিবার মাইজভাণ্ডার শরিফ গাউসিয়া হক মনজিল উরস শরিফ উদযাপন কমিটির ব্যবস্থাপনায় আয়োজিত মাহফিলে সভাপতিত্ব করেন সাজ্জাদানশীন রাহবারে আলম হযরত সৈয়দ মোহাম্মদ হাসান মাইজভাণ্ডারী (ম.জি.আ)। সভাপতির বক্তব্যে তিনি বলেন, আজ থেকে ১০০ বছর আগের যুগ এবং আজকের যুগের মধ্যে আসমান জমিন পার্থক্য রয়েছে। এই যুগ পরিবর্তনকে যদি গভীরভাবে গবেষকের দৃষ্টিতে আবলোকন করা হয় তাহলে বেলায়তে মোকাইয়্যাদা এবং বেলায়তে মোতলাকার বাস্তবতা সহজেই বোধগম্য হবে। এই যুগ পরিবর্তন নিয়ে অনেক বেশি গবেষণা, সভা, সেমিনার হওয়া দরকার। নারীদের অধিকার সম্পর্কে তিনি বলেন, পবিত্র কোরআনের নির্দেশনা অনুযায়ী নারীরা সমাজের বিশেষ অংশ, সুতরাং শালীনতা ও সম্ভ্রমের মাধ্যমে তাদের কর্মের অধিকার, অর্থ উপার্জনের অধিকার, যৌক্তিক মতামত প্রকাশ ও নেতৃত্ব প্রদানের হক বিষয়ে ভাবনা-চিন্তার জন্য করা আবশ্যক হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ নারীদেরকে পরনির্ভরশীল হিসেবে যদি আমরা বিবেচনায় রাখি এবং কুসংস্কার লালন করি, তাহলে একশ কোটির উম্মাহর সদস্যের মধ্যে অর্ধেকই অনগ্রসর এবং পরনির্ভরশীল হয়ে থাকার আশংকা রয়েছে, যা অর্থনৈতিক অগ্রগতি এবং সামাজিক রূপান্তরের পথ রুদ্ধ করে দেবে। তিনি আরো বলেন, মানবসেবার মাধ্যমে আল্লাহ্ পাকের সন্তুষ্টির পথ নির্দেশনা দান করেছেন বিশ্বঅলি হযরত শাহানশাহ সৈয়দ জিয়াউল হক মাইজভাণ্ডারী (ক.)। সব মানুষের প্রতি নিঃস্বার্থ ভালোবাসা, মানুষকে শ্রদ্ধা ও সম্মান দেখানোর শিক্ষাই তিনি শিখিয়ে গেছেন। তাঁর জীবনাদর্শ অনুসরণের মাধ্যমে ব্যক্তি, পরিবার, জাতীয় জীবনসহ সামগ্রিক জীবনকে সুন্দর ও সার্থক করে তুলতে হবে। আজকের এ দিনে আল্লাহর নবী হযরত ঈসা (আ.) পৃথিবীতে তশরিফ এনেছেন তাওহীদ, মানুষে মানুষে ভালবাসা এবং প্রেম-প্রীতির বাণী নিয়ে। তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে তিনি বক্তব্য সমাপ্ত করেন।
কেন্দ্রিয় মাহফিলে ‘পবিত্র কুরআন-হাদিসের আলোকে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মর্যাদ’বিষয়ে মাওলানা মুহাম্মদ তরিকুল ইসলাম, ‘যাকাত প্রদানে নারীর হক’বিষয়ে মাওলানা মুহাম্মদ মিনহাজ উদ্দিন, ‘সুফিদের জজবায়ী কালাম’বিষয়ে মাদরাসা-ই-গাউসুল আযম মাইজভাণ্ডারীর আরবি প্রভাষক মাওলানা মুহাম্মদ মুজিবুল হক, ‘তাসাওউফ জগতে প্রেমধারা এবং হযরত ঈসা (আ.)’ বিষয়ে নেছারিয়া কামিল মাদরাসার ফকিহ্ মাওলানা মুহাম্মদ মাওলানা এ বি এম আমিনুর রশিদ, ‘প্রসঙ্গ: বেলায়তে মোকাইয়াদা এবং বেলায়তে মোত্লাকা যুগ’বিষয়ে সাতগাছিয়া দরবার শরিফের সাজ্জাদানশীন মাওলানা আবুল ফজল মুহাম্মদ ছাইফুল্লাহ্ সুলতানপুরী, ‘পূর্ববর্তী যুগে প্রণীত ফিক্বহি কিতাবাদী এবং বর্তমান পরিবর্তিত বিশ্ব বিষয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় মিজানুস্ সালাম জামে মসজিদের খতিব ড. মাওলানা মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম আজহারী আলোচনা করেন।
আখেরি মুনাজাতে মাইজভাণ্ডারশরিফ গাউসিয়া হক মনজিলের সাজ্জাদানশীন হযরত সৈয়দ মোহাম্মদ হাসান মাইজভাণ্ডারী (ম.) মুসলিম উম্মাহর শান্তি, নিপীড়িত মানবতার মুক্তি ও দেশবাসীর ওপর আল্লাহর রহমত কামনা করেন। তিনি এদেশকে আরো উন্নত ও সমৃদ্ধশালী রাষ্ট্র হিসেবে কবুল করতে এবং বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দীর্ঘায়ু ও সুস্বাস্থ্যের জন্যে মহান রাব্বুল আলামীনের কাছে ফরিয়াদ করেন। তাঁর দূরদর্শী ও দক্ষ নেতৃত্বের কারণে বাংলাদেশের উন্নয়নের যে মাইলফলক স্থাপিত হয়েছে তা আরো বেগবান করতে এবং সকল সংকট দুর করে সকলের অন্ন-বস্ত্র-শিক্ষা-বাসস্থান-চিকিৎসা তথা মানুষের মৌলিক চাহিদা নিশ্চিত করার চেষ্টায় সফলতার জন্যে তিনি মহান রাব্বুল আলামীনের দরবারে বিশেষভাবে ফরিয়াদ জানান।
খোশরোজ শরিফ উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যে ছিল খোশরোজ শরিফের দিন স্থানীয় দৈনিকে বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ, দরবার শরিফ এলাকায় উপদেশ ও দিক-নির্দেশনা সম্বলিত প্রচার, বিশুদ্ধ পানীয় জল, ওযু এবং অস্থায়ী টয়লেটের ব্যবস্থা, নগরের মুরাদপুর হতে দরবার শরিফ পর্যন্ত বিআরটিসি’র বিশেষ বাস সার্ভিস।