Logo
রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০৭ পূর্বাহ্ন

আর কত প্রাণ ঝরলে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক ৪ লেনে উন্নিত হবে

ঝুঁকিতে পর্যটন পথ,চট্টগ্রাম নগর ছাত্রদল নেতার অবস্থান কর্মসূচি

কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দিন দিন বেড়ে চলেছে প্রাণঘাতী সড়ক দুর্ঘটনা। সবচেয়ে ভয়ংকর রুপ ধারণ করেছে চুনতি জাঙ্গালিয়া অংশে। যেখানে প্রতিদিনই ঘটছে দুর্ঘটনা। এতে হতাহতের পাশাপাশি মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে এ সড়কে চলাচলকারী যানবাহনগুলোও।

মহাসড়কটি চার লেন বা ছয় লেন করা না হলে দুর্ঘটনা কোনোভাবেই কমানো যাবে না বলে মত দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

সবশেষ ঈদুল ফিতরের প্রথম তিন দিনেই লোহাগাড়া উপজেলার চুনতি জাঙ্গালিয়া নামক এলাকায় সড়ক দূর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে অন্তত ১৬ জন, ২টি পরিবার হয়ে গেছে নিঃস্ব, প্রায় ২০ জনেরও অধিক আহত হয়েছেন, বাবা-মা হারিয়ে মৃত্যুর সাথে এখনো পাঞ্জা লড়ছে এক শিশু, অনেকেই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

এ বিষয়ে দোহাজারী হাইওয়ে থানার ওসি শুভ রঞ্জন চাকমা বলেন, অপ্রশস্ত মহাসড়ক, বাঁকের আগে ও পরে গতিরোধক না থাকা, লবণ পানি এবং ঢালু ও বিপজ্জনক বাঁক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। এছাড়া চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে অতিরিক্ত গাড়ির চাপের কারণে বেশিরভাগ দুর্ঘটনা ঘটছে।

পাশাপাশি বেপরোয়া গতি, অদক্ষ চালক, আইন না মেনে চলাচল, ইটভাটার মাটি ও লবণের পানি সড়কে পড়ে পিচ্ছিল হয়ে যাওয়াও দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ।

এদিকে মর্মান্তিক দুর্ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সহ সভাপতি সৌরভ প্রিয় পাল চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কটিকে চার লেনে উন্নীত করার দাবিতে গতকাল রবিবার চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব চত্বরে একক অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন।

দুপুর আনুমানিক ৩টায় নগরীর প্রেস ক্লাবের সামনে প্লেকার্ড হাতে নিয়ে নিজের ফেইসবুক আইডি থেকে লাইভে এসে তিনি জানান চট্টগ্রাম কক্সবাজার মহাসড়ক দ্রুত চার লেনে উন্নীতকরণের দাবীতে আমার এই একক অবস্থান কর্মসূচি।

এই বিষয়ে মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা চাই যত দ্রুত সম্ভব সড়কটি ছয় লেনের মাস্টার প্ল্যান করে এখনই চার লাইনের কাজ শুরু করা হোক। আমাদের টানেলের চেয়ে বেশি প্রয়োজন ছিলো চট্টগ্রাম কক্সবাজার মহাসড়কটি ৬ লেনে উন্নীতকরণ।

আগামী কয়েকমাসের মধ্যে কালুরঘাট সেতুর কাজ শুরু হচ্ছে, এটা হলে এই সড়কের উপর আরো বেশি চাপ বাড়বে। আমরা চাই অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুস বীর চট্টলার কৃতি সন্তান, তিনি এটা দ্রুত বাস্তবায়ন করবেন। এটা এখন কেবলই দক্ষিণ চট্টগ্রামের দাবি নয় জাতীয় দাবিতে পরিণত হয়েছে।

গত ২রা এপ্রিল কক্সবাজার মহাসড়কের চুনতি এলাকায় ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক সড়ক দূর্ঘটনায় আমাকে ১১ টি তাজা লাশ দেখতে হয়েছে। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসা লাশগুলো নিজহাতে তাদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করেছি।

কাছ থেকে তাদের স্বজন হারানোর আত্ম চিৎকার শুনেছি। চিকিৎসা নিতে আসা দূর্ঘটনায় আহত প্রেমা, আরাধ্য ও দুর্জয় কে হাসপাতালের বেডে শুয়ে যন্ত্রণায় ছটফট করতে দেখেছি। বাবা-মা হারিয়ে শিশু আরাধ্যা এখনো মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে। উন্নত চিকিৎসার জন্য সে এখন ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

শিশু আরাধ্যার কষ্টের বিবরণ দিতে গিয়ে একপর্যায়ে আবেগ আপ্লুত হয়ে তিনি বলেন আর কত তাজা প্রাণ অকালে ঝরে গেলে আমাদের সড়কে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হবে। আমরা স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি চাই। আমরা এই মহাসড়কে আর কোন লাশ দেখতে চাই না।

অবস্থান কর্মসূচি থেকে ঘোষণা দিয়ে আজ সোমবার (৭ এপ্রিল) চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার অভিমুখে দাবী আদায়ের লক্ষ্যে নিহতদের স্মরণে কালোব্যাজ ধারণ করে একটি পদযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। যা চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব থেকে সকাল ১০ টায় শুরু হয়ে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক হয়ে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে এসে শেষ হয়।

উল্লেখ্য গত বুধবার সকালে এ সড়কে কক্সবাজারমুখী রিলাক্স পরিবহনের একটি বাস ও বিপরীতমুখী যাত্রীবাহী মাইক্রোবাসের সংঘর্ষে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান সাতজন। আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে মারা যান আরও তিনজন।

এর আগে ঈদের দিন সকালে লোহাগাড়ার চুনতি জাঙ্গালিয়ায় মহাসড়কের একই স্থানে সৌদিয়া পরিবহনের একটি বাস এবং মিনিবাসের সংঘর্ষে ৫ জনের মৃত্যু হয়। সেই দুর্ঘটনায় আহত হন আরও ছয়জন।

এর আগে মহাসড়কের এই স্থানেই ২০২০ সালের ২১ মার্চ রাতে ট্রাক-পিকআপের সংঘর্ষে ১৫ জন নিহত হন। সে সময় বেশ কয়েকজন আহতও হন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


ফেসবুক পেইজ